শ্রমিক নিহতের পর ইপিজেডের সব কারখানা বন্ধ, ঘটনা তদন্তে কমিটি

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বুধবার বন্ধ রয়েছে ইপিজেডের সব কারখানা। মোতায়েন করা আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীছবি: প্রথম আলো

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের জেরে সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহতের পর সেখানকার সব কারখানা বন্ধ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইপিজেডে দুই প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ ও সেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ইপিজেডের মূল ফটক।

সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে কারখানা খুলে দিতে আজ বুধবার বিকেলে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানামালিক, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, বেপজা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা সেনাবাহিনী, বিজিবি, ইপিজেড, কারখানা কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবির বিষয়ে পর্যালোচনা করেছেন। আজ শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে আবার সভা হবে। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো কারখানার মালিকেরা মেনে নিয়েছেন। আশা করছেন, আজকের সভার পর আগামীকাল থেকে কারখানাগুলো খোলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, গতকালের ঘটনায় বেপজার পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে।

এর আগে গতকাল ইপিজেডে ‘এভারগ্রিন’ নামের একটি কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের জেরে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে হাবিব ইসলাম (২১) নামের এক শ্রমিক নিহত হন। আহত হন পুলিশ, সেনাসদস্যসহ আরও অন্তত ২৪ জন। নিহত হাবিব ইসলাম ‘ইকু ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি কারখানার কর্মী ছিলেন। তাঁর বাড়ি জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাজীরহাট মাছিরচাক গ্রামে।

আরও পড়ুন

কারখানার শ্রমিকেরা জানান, এভারগ্রিন কারখানায় সম্প্রতি ৫১ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ ঘটনায় তিন দিন ধরে কারখানায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন–ভাতা না দিয়ে গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে ইপিজেডের প্রধান ফটকে নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।

সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে এভারগ্রিনের শ্রমিকেরা ভেতরে ঢুকতে না পেরে ইপিজেডের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকেরা তাঁদের ওপর চড়াও হন। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালালে এক শ্রমিক নিহত হন।

আরও পড়ুন

এদিকে নিহত হাবিবের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়। বিকেল চারটার দিকে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ময়নাতদন্ত ছাড়াই জোর করে তালা ভেঙে হাবিবের লাশ নিয়ে যান। পরে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে হাবিবকে দাফন করা হয়।

জানতে চাইলে নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রক্রিয়া চলমান।