গতকাল বুধবার রাতে বরিশাল শহরে প্রেমাকান্তের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। বাংলা বলতে পারেন না। ইংরেজিতে কথা হয়। প্রেমাকান্ত বলেন, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে অনেক আগেই তিনি এ দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আর আসা হয়নি। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় তিনি মনস্থির করেন, দূর থেকে আর নয়, সরাসরি দেখবেন মনের মানুষটিকে। শেষমেশ গত ২৪ জুলাই তিনি বরিশালে আসেন। এরপর তিনি শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। পরদিন দুপুর ১২টায় বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের সামনে দুজন দেখা করেন। দুপুরে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে খাবার খান। ওই দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে পুনরায় তাঁরা দেখা করেন, কথা বলেন। এ সময় মেয়েটির সঙ্গে তাঁর কয়েকজন বান্ধবীও ছিল।

যে মেয়েটির সঙ্গে ওই যুবক তাঁর প্রেমের সম্পর্কের কথা বলছেন, সেই মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে প্রেমাকান্তকে অবহিত করেন। পরে হাইকমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলেটি নিজ দায়িত্বে ভারতে চলে যাওয়ার কথা বললে গত সোমবার ঢাকার একটি বাসে উঠিয়ে দেয় পুলিশ।
কমলেশ চন্দ্র হালদার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), বরিশাল বিমানবন্দর থানা

২৭ জুলাই তাঁরা দুজন পুনরায় শহরে ঘুরতে বের হন। কাশিপুর এলাকায় গেলে চয়ন হালদার নামের এক যুবক দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে ওই মেয়ের। এরপর চয়ন প্রেমাকান্তকে মারধর করেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে টাকাও ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনার পর মেয়েটি ও তার পরিবারের সঙ্গেও তিনি আর যোগাযোগ করতে পারেননি।

মারধরের বিষয়ে প্রেমাকান্ত বরিশাল মেট্রোপলিটনের বিমানবন্দর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর তিন দিন তাঁকে পুলিশের হেফাজতে থাকতে হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (প্রেমাকান্ত) বৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন। তাই বিদেশিদের পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে তাঁর নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দিন থানায় রাখা হয়েছে। এ সময় পুরো ঘটনা তিনি পুলিশকে বলেছেন। পরে বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তাঁরা। হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ওই ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেন।

ওসি বলেন, যে মেয়েটির সঙ্গে ওই যুবক তাঁর প্রেমের সম্পর্কের কথা বলছেন, সেই মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে প্রেমাকান্তকে অবহিত করেন। পরে হাইকমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলেটি নিজ দায়িত্বে ভারতে চলে যাওয়ার কথা বললে গত সোমবার ঢাকার একটি বাসে উঠিয়ে দেয় পুলিশ।

প্রেমাকান্ত প্রথম আলোকে বলেন, ১ আগস্ট পুলিশ তাঁকে ঢাকাগামী বাসে তুলে দেয়। পরে তিনি মাঝপথে নেমে আবার বরিশালে ফিরেছেন। তিনি বলেন, কাল শুক্রবার ওই তরুণীর বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলায় যাবেন। ওর পরিবারের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চান।

এ ব্যাপারে ওসি বলেন, পাসপোর্টের জন্মতারিখ অনুযায়ী প্রেমাকান্তের বয়স ৩৬ বছর। আর মেয়েটির মতামত দেওয়ার মতো বয়স হয়নি। সে ক্ষেত্রে উনি (প্রেমাকান্ত) এখন যেটা করছেন, সেটা নিছক পাগলামি ছাড়া কিছু নয়।

এদিকে যাঁর বিরুদ্ধে মারধর-হেনস্তার অভিযোগ করছেন প্রেমাকান্ত, সেই চয়ন হালদার দাবি করেন, মেয়েটির ফেসবুক বন্ধু ওই তামিল যুবক। এর বাইরে কিছু নয়।

এদিকে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রেমাকান্ত যার প্রেমে পড়েছেন, সে বরগুনার তালতলী উপজেলা সদরের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর মেয়ে। মেয়েটি বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তবে সে এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। মেয়েটির ছোট চাচা আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে ওই ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কি না, সেটা জানি না।’ মেয়েটির বাবার মুঠোফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, ‘রাতে আমি আপনাকে তাঁর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেব।’

এদিকে যাঁর বিরুদ্ধে মারধর-হেনস্তার অভিযোগ করছেন প্রেমাকান্ত, সেই চয়ন হালদার (২২) আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, প্রেমাকান্তকে মারধরের অভিযোগ সত্য নয়। তিনি যা বলছেন তা সবই মিথ্যা। চয়ন বলেন, ‘ফেসবুকে কারও সঙ্গে কারও কথা হতেই পারে। মেয়েটির সঙ্গে শুধু কথাই হয়েছে। প্রেমের কোনো সম্পর্ক হয়নি। মেয়েটি আমার এলাকার ছোট বোন, আমি বিষয়টা জানতে পেরে প্রেমাকান্তের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই ছেলেকে যারা এ দেশে আসতে সহযোগিতা করেছে, তারা আমাকে ডেকেছিল। আমি সেখানে যাওয়ার পর সবার সামনে বসে ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তখন প্রেমাকান্ত বিভিন্ন আবদার করছিল। ওর সঙ্গে একাকী কথা বলতে চাইছিল। এমন কথাও বলছিল, মেয়েটি যদি তাকে ভালোবাসতে রাজি না হয়, তবে তার জীবন ধ্বংস করে দেবে। আমি যতটুকু জানি, তারা ফেসবুক বন্ধু। এর বাইরে কিছু নয়।’

আজ সন্ধ্যায় মেয়েটির বাবার মুঠোফোনে ফোন করলে পরিচয় জানার পর তিনি বলেন, ‘আপনি কেন ফোন করেছেন, কী জানতে চান, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।’ এসব বলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

প্রেমাকান্ত প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজন নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী। তাঁর বাড়ি তামিলনাড়ুর রানীপেট জেলায়। তাঁর বাবা সরকারি চাকরি করতেন, এখন অবসরে আছেন। মা গৃহিণী। তাঁরা দুই ভাই, এক বোন। বোন সবার ছোট। তিনি মেজ। প্রেমাকান্ত বলেন, তিনি কেবল মেয়েটির টানেই এত দূর পথ এসেছেন। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, তাঁর ‘প্রেমিকা’ তাঁকেই ভালোবাসে।