৩৩ বছর ভ্যান চালিয়েও অভাব দূর হলো না তাঁর

প্যাডেলচালিত ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন বৃদ্ধ মজিবুর রহমান। আজ শনিবার সকালে রাজশাহীর বাগমারা থানা মোড় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

চোখে চশমা। দুই হাতে শক্ত করে ধরে আছেন ভ্যানের হ্যান্ডেল। আর পা দিয়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে ছুটে চলেছেন ৭২ বছর বয়সী মজিবুর রহমান। মাথা বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম হাত দিয়ে মুছে আবার হ্যান্ডেলে হাত রেখে ভ্যান নিয়ে ছুটে যান সামনের দিকে। ভ্যান চালিয়ে এভাবেই কেটে গেল ৩৩ বছর। বয়সের ভারে এখন ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালাতে চান। কিন্তু টাকার অভাবে নিজের ভ্যানকে আর ব্যাটারিচালিত ভ্যানে রূপান্তর করতে পাচ্ছেন না তিনি।

আজ শনিবার সকালে রাজশাহীর বাগমারা থানার মোড়ে মজিবুর রহমানের সঙ্গে আলাপকালে এসব বিষয় জানা যায়। তাঁর বাড়ি বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। ৩৩ বছর আগে ৩৯ বছর বয়সে দেড় হাজার টাকা দিয়ে কাঠের প্যাডেল ভ্যান তৈরি করে নিয়েছিলেন মজিবুর। সেই ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। জীবিকার তাগিদে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় তিনি ভ্যান নিয়ে ছুটেছেন। তিন চাকার ভ্যান থেকে আয় করে ছয় সদস্যের পরিবার সামলিয়েছেন। কয়েক বছর আগে তাঁর এক মেয়ের সঙ্গে স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর বাবা সংসারে এসে ঠাঁই নেন সেই মেয়ে।

মজিবুর রহমান বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিয়েছে। তাই আগের মতো শক্তি দিয়ে ভ্যান চালাতে পারেন না। যাত্রী বা মালবোঝাই ভ্যান নিয়ে বেশি দূরে যেতেও পারেন না। সকালে ভ্যান নিয়ে বাগমারা থানার মোড়ে আসেন। সেখান থেকে আশপাশে ভাড়া খেটে বাড়ি ফিরে যান।

মজিবুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, কুঁড়েঘরে তাঁরা বসবাস করেন। তাঁর স্বামীর ভ্যান চালানোর টাকা ও বয়স্কভাতার টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার টেনে নিচ্ছেন। তবে ভ্যানের ভাড়া প্রতিদিন হয় না। মাঝেমধ্যে ৫০ টাকাও রোজগার করতে পারেন না। আয়ের ওপর ভিত্তি করে এক বেলার খাবার তিন বেলায় ভাগ করে খেতে হয়। তিনি আরও বলেন, ছেলেরা বড় হয়ে আলাদা সংসার গড়েছেন। তাঁরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

জীবনসায়াহ্নে আসা মজিবুর রহমান নিজের উপার্জন দিয়ে সারা জীবন চলতে চান। কিন্তু বয়সের ভারে আগের মতো আর ভ্যান চালাতে পারেন না। তাই এখন তিনি তীব্রভাবে ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যান কেনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বয়স দেখে এনজিওগুলো ঋণ দেয়নি। ফলে নিজের ভ্যানটি আর ব্যাটারিচালিত ভ্যানে রূপান্তর করতে পারেননি।

বৃদ্ধ মজিবুর রহমান পরিশ্রমী মানুষ বলে জানান স্থানীয় কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, টাকার অভাবে তিনি নিজের পুরোনো ভ্যানকে অটোভ্যানে রূপান্তর করতে পারেননি। তবে তাঁকে বয়স্কভাতার তালিকায় অন্তভুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ভবানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, মজিবুর রহমান এই বয়সেও প্যাডেল ঘুরিয়ে যেভাবে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন, এটি তাঁদের পীড়া দেয়। শত কষ্টেও বৃদ্ধ মানুষটি অন্যের কাছে হাত না পেতে নিজের উপার্জনেই চলছেন।