দখল–ভরাটে অস্তিত্বসংকটে বরগুনার খাকদোন নদ

খাকদোন নদের ১৫.৪৭ একর জমি দখল করে রেখেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। দখল হয়ে যাওয়ায় এবং সঠিকভাবে খনন না করায় নদের গভীরতা কমে গেছে।

খাকদোন নদ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গতকাল বরগুনা নদীবন্দর–সংলগ্ন এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বরগুনার খাকদোন নদ দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রতিবছর খননকাজ করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। এতে নদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। দখলমুক্ত করে পরিকল্পিত খননের মাধ্যমে এই নদের গভীরতা না বাড়ালে বরগুনা নৌবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়বে পরিবেশ-প্রকৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। খাকদোন নদের অস্তিত্ব বিলীন হলে জেলার অন্তত ১৫টি প্রাকৃতিক খালও হারিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরগুনা কার্যালয় সূত্র জানায়, বরগুনা নদীবন্দর নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতিবছর খাকদোন নদের উৎপত্তিস্থল বিষখালী নদী থেকে বরগুনা নদীবন্দরের পূর্ব পাশ পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে খননকাজ করা হচ্ছে। তবে দখলের কারণে নাব্যতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে অস্তিত্ব সংকটের পড়েছে নদটি। বরগুনা-ঢাকা নদী পথে প্রতিদিন দুটি লঞ্চ ঢাকা-বরগুনায় আসা–যাওয়া করে। শুষ্ক মৌসুমে এসব লঞ্চ নাব্যতাসংকটে বরগুনা নদীবন্দরে না এসে শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরের ঢলুয়া এলাকা থেকে যাত্রী তুলে ও নামিয়ে দেয়।

 

নদ খনন ও দখল উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা নদীবন্দরের সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, ‘নদ খননের বিষয়টি আমার আওতায় না। এটা দেখে খনন বিভাগ। আর বরগুনায় আগেই অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। অবৈধ দখদারদরে উচ্ছেদে অভিযান চালানোর জন্য জন্য ২ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি জেলা প্রশাসন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নদীবন্দর থেকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। চিঠি দিলে অবশ্যই নির্বাহী ম্যাজিট্রেট দেওয়া হবে।’

বিআইডব্লিউটিত্র সূত্রে জানা গেছে, ঢলুয়া থেকে বরগুনা শহরের মাছ বাজার এলাকা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ ১৫০ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিদের নামও রয়েছে। তাঁরা নদের ১৫.৪৭ একর জমি দখল করে রেখেছেন।

  অবৈধ দখলদারের তালিকায় ৭৯ নম্বরে রয়েছে মিলন স্টোর নামের একটি একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তারা উপজেলা পরিষদের সামনে খাকদোন নদের চর দখল করে ইট-বালুর ব্যবসা করছে। মিলন স্টোরের মালিক আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, ‘আমাদের রেকর্ডভুক্ত জমিতে আমরা ইট-বালুর ব্যবসা করে আসছি। এখন ইট-বালু পড়ে নদ ভরাট হয়ে গেছে। সরকার চাইলে আমরা নদের জায়গা ছেড়ে দেব।’

বরগুনা নদীবন্দর কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, একসময় খাকদোন নদের প্রস্থ সোয়া কিলোমিটার ছিল। এখন প্রস্থ কমে ২৫০ মিটার হয়েছে। নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এ নদের পানি স্বল্পতা দূর করতে খনন করা হলেও অল্প কয়েক দিনের মধ্যে জোয়ারে পলি জমে নদের ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভাটার সময় পানি কম থাকায় আটকে পরা নৌযানগুলোকে জোয়ারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

 সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনা নদী বন্দরের পশ্চিম পাশে নদের চরদখল করে একটি কাঠ বাজার গড়ে উঠেছে। নদের বিভিন্ন জায়গায় দখলীয় জমির পরিধি বাড়ানোর জন্য ইট-সুরকি ফেলা হচ্ছে।

বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা এলাকার বাসিন্দা লঞ্চযাত্রী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ঢাকা থেকে বরগুনায় এসেছি, নদীতে পানি না থাকায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আমাদের ঢলুয়ায় নামিয়ে দিয়েছে। এতে আমাদের সময় অর্থ—দুই–ই অপচয় হয়েছে।’

শাহরুখ–১ লঞ্চের মাস্টার মো. শাহীন বলেন, ‘বর্তমানে ভাটার সময় পানির আট ফুট গভীরতা পাওয়া যায়। কিন্তু একটি লঞ্চ চলাচল করতে হলে স্বাভাবিকভাবে ১০–১২ ফুট গভীরতা প্রয়োজন। আর এক মাস পর পানি কমে যাবে। তখন আমরা লঞ্চ নিয়ে পন্টুনে যেতে পারব না। পানি কম থাকায় আমাদের কম গতিতে লঞ্চ চালাতে হয়। এতে আমাদের সময় ও জ্বালানির অপচয় হয়।’