সাবেক পৌর মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী তীরে যৌথ বাহিনীর উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিয়ে সড়ক টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন স্থানিয় বাসিন্দারা। গত শুক্রবার সকালেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কার্যাক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক কাউন্সিল, আইনজীবী, ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ এজাহারনামীয় ২৯ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও এক হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন বিআইডব্লিউটিএ- কক্সবাজার নদীবন্দর পোর্ট অফিসার মো. আবদুল ওয়াকিল। মামলার আসামির মধ্যে আছেন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম নুনিয়াছটার বাসিন্দা মো. মনির উদ্দিন, বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) আতিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক, তাঁর ছোট ভাই কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিনুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আইনজীবী আবদুল খালেক, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও পর্যটকবাহী জাহাজ ব্যবসায়ী হোসাইন ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হুমাইরা বেগম প্রমুখ।

পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর দেওয়া তথ্যমতে, এর আগে ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর নদীর কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ায় যৌথ বাহিনীর উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়ার ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ এবং পুলিশ বাদী হয়ে একই থানায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬৫০ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য এবং বিআইডব্লিউটিএর একজন সদস্য আহত হন। ইটের আঘাতে পুলিশের এক সদস্যের মাথা ফেটে যায়।

আজ দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ নম্বর জেটিঘাট ও তার আশপাশে বাঁকখালী নদী ও নদীর তীরভূমি দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে আসামিদের পরোক্ষ ও আর্থিক সহযোগিতায় ও উপস্থিতিতে ৫০-৬০ জন লোক স্লোগান দিতে দিতে জেটিঘাট অভিমুখী সড়কে এসে সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। উচ্ছেদ অভিযান বানচাল করেন। পরবর্তী সময়ে আসামি মনির উদ্দিনের নেতৃত্বে ৮০০-১০০০ জন নারী ও পুরুষ ৬ নম্বর জেটিঘাট ও বিমানবন্দর সড়কের সংযোগস্থল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হন। একপর্যায়ে বিমানবন্দর সড়ক যান চলাচল বন্ধ করে গাছের টুকরা, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। আসামিদের সঙ্গে নুনিয়াছটা, ৬ নম্বর জেটিঘাট এলাকা, পেশকারপাড়া, কস্তুরাঘাট, বাহারছড়াসহ বিভিন্ন এলাকার নদীর অবৈধ দখলদারেরা যোগ দেন। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য আনা বিআইডব্লিউটিএর খননযন্ত্র ভেঙে দেন এবং চালককে আঘাত করেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। উচ্ছেদ অভিযান শুক্রবার থেকে বন্ধ আছে।

বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, হাইকোর্টের আদেশে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকার বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান শুরু হয়। সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব পুলিশ, আনসার ও জেলা প্রশাসনের চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন। অভিযানের দ্বিতীয় দিন ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে কন্তুরাঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেন কিছু নারী-পুরুষ। ওই সময় ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুই সদস্য ও বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মী আহত হন।

৩ সেপ্টেম্বর নদীর উত্তর পেশাকারপাড়ার অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে সেখানে বাধার মুখে পড়ে যৌথ বাহিনী ফিরে যায়। এরপর গত শুক্রবারও বাধার কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়নি।