শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা খালেদ শওকত আলীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নড়িয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকায় হওয়া এ সংঘর্ষে দুই পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর আবার দুই পক্ষের সাতটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা ও সখিপুর থানা নিয়ে শরীয়তপুর-২ আসনটি গঠিত। এ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ শওকত আলী। এ ছাড়া আরও আট প্রার্থী এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলীয় নেতা-কর্মী, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার দিকে নড়িয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বিপ্লবসহ কয়েকজন নড়িয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের কাজে যান। তখন ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী ও তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় দুই পক্ষের সমর্থকদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলা চালালে দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামানের মাথা ফেটে যায়। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয় মীর আহত হন। স্থানীয় মানুষ তাঁদের উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত সাড়ে সাতটার দিকে নড়িয়া উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ওই ঘটনার পর ফতেজঙ্গপুর, সোনার বাজার ও পাইকপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। আর বাঁশতলা, কেদারপুর, চণ্ডীপুর ও হালইসার এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীকের চারটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক শামীম রাত আটটার দিকে আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলের মধ্যে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য যুবলীগের ওই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যেভাবে আওয়ামী লীগের ও শেখ হাসিনার কর্মীদের রক্ত ঝরিয়েছেন, এটা বিএনপির ইন্ধনে করেছেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণসংযোগে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ সভাপতি বিপ্লবের নেতৃত্বে কয়েকজন আমার কর্মীদের পথরোধ করেন। তখন এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে তাঁরা আহত হয়ে থাকতে পারেন। এ জন্য আমি দুঃখিত।’ তাঁর দাবি, তাঁর সমর্থক হারুন খলিফা ও আরিফ হোসেনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
তবে খালেদ শওকত আলীর উপস্থিতিতেই তাঁর সমর্থক হারুন খলিফা ও আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বিপ্লব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। পিটিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী।’
শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক তিনজনকে পিটিয়ে আহত করার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এখনো তাঁরা কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, দুঃখজনকভাবে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এ ঘটনার পর নড়িয়া উপজেলা সদর ও এর আশপাশের এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও র্যাব টহল দিতে শুরু করেছে।