‘ছোট্ট একটা ছেলেকে দাঁড় করানো হচ্ছে, আমি তো এমপি ইলেকশনে কারও বিরোধিতা করিনি’

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখছেন জেলা সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চত্বরেছবি: প্রথম আলো।

‘আমি ছোট্ট একটা ছেলের সাথে কনটেস্ট (প্রতিদ্বন্দ্বিতা) করতে যাব কোন দুঃখে? আমাকে অপমান করার জন্য এটা করা হইছে। আমি তো এমপি ইলেকশনে কারও বিরোধিতা করিনি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা ও ইফতার বিতরণ অনুষ্ঠানে ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেন দলের জেলা শাখার সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী। আগামী ৮ মে সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়।

৭৫ বছর বয়সী খায়রুল আনম চৌধুরী টানা তিন মেয়াদে সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে ছেলে আতাহার ইশরাক চৌধুরী ওরফে সাবাবের নাম ঘোষণা করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী।

সংসদ সদস্য একরামুলকে ইঙ্গিত করে সভায় খায়রুল আনম চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে অপমান করার জন্য ছোট্ট একটা ছেলেকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে। আমি তো আছি, আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে; আমি নাকি ফেরাউন, আমি নাকি মানুষকে শোষণ করছি।’ খায়রুল আনম আরও বলেন, ‘তিনি এত মিথ্যা কথা বলেন, আমি কুলাই উঠতে পারি না। একেক সময় একেক কথা বলেন, একেক সময় একেক রূপ ধরেন।’

সভায় দলের নেতাদের উদ্দেশে খায়রুল আনম চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে নানান ধরনের হিসাব আছে, আমি অনেক বছর আপনাদের সাথে ছিলাম, কাজ করছি। আপনারা যদি ইমানের সহিত কাজ করেন, আমাকে এই বয়সে অপমান করিয়েন না। আমাকে যদি অপমান করার খেয়াল থাকে, আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে দিয়ে এই কাজ (নির্বাচন) করাইয়েন না। আমি দলের হাইকমান্ডের সাথে কথা বলব।’

খায়রুল আনম চৌধুরী বলেন, ‘শেষ বয়সে আমার কোনো ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা নেই। আমি আপনাদের সাথে ছিলাম, থাকব। আমি তো কারও বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি, আমি তো টেন্ডারবাজি করিনি, চাকরি-বাণিজ্য করিনি। কাউকে গালি দি নাই, তারপরও আমার ভুলত্রুটি থাকতে পারে।’

উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত বর্ধিত সভা ও ইফতার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান, নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিহাব উদ্দিন, নোয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওদুদ, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী প্রমুখ।

বর্ধিত সভায় খায়রুল আনম চৌধুরীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে একরামুল করিম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তাঁর মুঠোফোনে রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একরামুল করিম চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। কমিটিসহ নানা বিষয়ে দলের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরীর সঙ্গে একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের জেরেই খায়রুল আনামকে হারাতে একরামুল করিম চৌধুরী তাঁর ছেলেকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী করছেন বলে ধারণা দলের নেতাদের।