বছরের শেষ সময়ে জমে ওঠে রাজনীতির মাঠ  

হানাহানির পথ পরিহার করে সমৃদ্ধ কুমিল্লা গড়ার সুস্থ পরিবেশের আশা জেলার বাসিন্দাদের।

কুমিল্লায় বছরের মধ্যভাগ থেকে শেষ সময় পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ ছিল উত্তাপ। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে নাটকীয়তা, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির সম্মেলন, বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে মন-কষাকষি এবং বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙা ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন প্রকাশ্যে সড়কে অস্ত্র প্রদর্শনও নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। 

রাত পোহালে নতুন বছর শুরু হবে। এ বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম মুহূর্ত। এ সময় সুস্থ রাজনীতি চান ভোটাররা। হানাহানির পথ পরিহার করে সমৃদ্ধ কুমিল্লা গড়ার সুস্থ পরিবেশের আশা জেলার বাসিন্দাদের।

নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে উত্তেজনা   

গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। বিকেল চারটায় ভোট শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা নামতেই উত্তেজনা তৈরি হয় আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। রাত পৌনে নয়টার দিকে একে একে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা হয়—এমন সময় শিল্পকলা একাডেমির ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে সমর্থকদের নিয়ে উপস্থিত হন মনিরুল হক। তখন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে মিছিল নিয়ে মনিরুল হকের ওপর হামলে পড়েন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা। তখন সঙ্গে থাকা কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে রক্ষা করেন। নির্বাচনে ৩৪৩ ভোটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জয়ী হন। ফল নিয়ে চলে নানা সমালোচনা ও বিতর্ক। 

বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে অসন্তোষ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পর কুমিল্লা মহানগর বিএনপির প্রথম আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৩০ মে এতে আমিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক ও ইউসুফ মোল্লাকে সদস্যসচিব করা হয়। এই কমিটিতে আমিরুজ্জামানের অনুসারী উদবাতুল বারীকে ১৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। কমিটি ঘোষণার দিন রাতে তাত্ক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে আমিরুজ্জামান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ৭ জুন আমিরুজ্জামানকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে ৩১ আগস্ট কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি পরিবর্তন করা হয়। একই সঙ্গে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ২৫ জনে নামিয়ে আনা হয়। 

বাধা ছাড়াই বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

২৬ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়। এ উপলক্ষে অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট হলেও কুমিল্লায় পরিবহন ধর্মঘট হয়নি। তবে সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে গণসমাবেশ হয় বলে জনশ্রুতি আছে। 

আওয়ামী লীগের সম্মেলন

অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের ৮ তারিখ পর্যন্ত কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের মহানগর, দক্ষিণ জেলা, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, দেবীদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলা সম্মেলন হয়। নাঙ্গলকোট, লাকসাম, দেবীদ্বার ও মুরাদনগরে নতুন নেতৃত্ব আসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে। এ ছাড়া ৫ নভেম্বর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে কান্দিরপাড় সড়কে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন, ব্যবহার করা হয়। ককটেল বিস্ফোরণ হয়। বছরের শেষ সময়ে এটিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নেয়।

উপাচার্যের সঙ্গে অসদাচরণ

দলীয় নেতা-কর্মীদের চাকরি ও ঠিকাদারি কাজ পেতে চলতি বছরের মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল মঈনের সঙ্গে অসদাচরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস মিয়া। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।