নোয়াখালীতে মাদ্রাসায় শিশুর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা
নোয়াখালীর সদর উপজেলার একটি মাদ্রাসায় জোবায়ের ইবনে জিদান (১২) নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, শিশুটি মাদ্রাসার একটি শৌচাগারে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরিবার বলছে, মাদ্রাসার মোহতামিম (পরিচালক) শিশুটিকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন।
পুলিশ জানায়, নিহত জোবায়ের ইবনে জিদান সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য চর উরিয়া গ্রামের ওমানপ্রবাসী আমিরুল ইসলামের ছেলে। সে নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর এলাকার তানজিরুল কোরআন সোবহানিয়া মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র ছিল।
নিহত জিদানের মা সাবরিনা খাতুন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে তাঁর দাদা মো. নুরুল হক নাতিকে দেখতে মাদ্রাসায় যান। সেখানে তিনি দেখেন, তাঁর নাতি একটি বেঞ্চের ওপর উপুড় হয়ে শোয়া। মেঝেতে বমি পড়ে আছে। তখন মাদ্রাসার মুহতামিম জিদানের দাদাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার নাতি পড়ালেখা পারে না। এ জন্য শাস্তি দিয়েছি, দেখেন।’
সাবরিনা খাতুন অভিযোগ করেন, আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাদ্রাসার মুহতামিম তাঁকে ফোন করে বলেন, ‘আপনারা দ্রুত নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে যান। আপনার ছেলে মাদ্রাসায় গলায় ফাঁস দিয়েছে।’ সাবরিনার অভিযোগ, মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছেন। হত্যার পর ফাঁসের নাটক সাজিয়েছেন। তিনি এর বিচার চান।
মাদ্রাসার মুহতামিম আফজাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, জিদান নামের ওই ছাত্র বিকেলে দিকে মাদ্রাসার শৌচাগারে ঢোকে। ওই সময় আরও দুজন ছাত্র শৌচাগারে ঢুকতে অপেক্ষায় ছিল। অনেকক্ষণ বের হচ্ছে না দেখে তারা দরজা ধাক্কা দিয়ে শৌচাগারের পেছনের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে গলায় পায়জামার রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে। তাৎক্ষণিক ছাত্রদের সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন।
জানতে চাইলে ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. শাহরিয়ার হাসিব প্রথম আলোকে বলেন, ফাঁস হলে পেছনের দিকে দাগ থাকার কথা না। কিন্তু তিনি প্রাথমিক অবস্থায় শিশুটির গলার পেছনের দিকে দাগ দেখতে পেয়েছেন। বিষয়টি তাঁর কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। ময়নাতদন্ত করলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এ বিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে। পরিবার অভিযোগ করলে সুনির্দিষ্টভাবে করতে হবে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে। মাদ্রাসার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।