আসামিকে না পেয়ে স্ত্রীর মাথায় ডিবি পুলিশের পিস্তল তাক, আদালতে মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামে গত শুক্রবার আসামি ধরতে অভিযান চালান ডিবি পুলিশের সদস্যরাছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামিকে না পেয়ে বাড়ির নারী-শিশুদের মারধর এবং আসামির স্ত্রীর মাথায় পিস্তল তাক করার ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক উপপরিদর্শকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিকুল হাসান বাদীর বক্তব্য শুনে মামলাটি গ্রহণ করেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।

মামলার পাঁচ আসামি হলেন জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম, সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের চান্দিয়ারা দক্ষিণ পাড়ার এনামুল হক (১৯), একই এলাকার শামসুল ইসলাম (৩০), তাজুল ইসলাম (৩৯) ও মো. সাগর (২০)। এ ছাড়া আসামিকে গ্রেপ্তারে যাওয়া ডিবির অন্যান্য ফোর্সসহ আরও আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদিপ্রবাসী নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বেগম আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০১২ (সংশোধিত ২০১৮)-এর ৪ ও ৫ ধারাসহ কয়েকটি ধারায় মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর বক্তব্য শোনেন এবং বিকেলে মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী বন্যা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেতে এই মামলা করেছি। ডিবি পুলিশের এই ত্রাসের ঘটনার পর ভয়ে আমার মেয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাই। সাদাপোশাকে আসামি ধরতে এসে পিস্তল তাক করে গুলি করার অধিকার তারা কোথায় পেল?’

মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, আসামি এনামুল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদীর স্বামী নূরুল আলমসহ তিনজনকে আসামি করে ২ এপ্রিল সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার বাদী আর্থিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো তদন্ত ছাড়াই দ্রুত মামলা নথিভুক্ত করা হয়। গত শুক্রবার বাদীর বাড়িতে সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠান ছিল। ওই দিন বিকেলে পাঁচ আসামি বিনা অনুমতিতে নূরুল আলমকে গ্রেপ্তার করতে বন্যার বাড়িতে ঢোকেন। এ সময় নূরুল আলমকে না পেয়ে বন্যার মাথায় পিস্তল তাক করেন এসআই রেজাউল করিম। স্বামীর কথা না বললে বন্যাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় কিলঘুষি মেরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া বাদীর স্বজনদের মারধর, নির্যাতন, গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ও চার ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও বালা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার চান্দিয়ারা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী আবদুল কুদ্দুসের ছেলে এনামুল হক স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে নূরুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার উল্লেখ করা হয়, সৌদি আরব থেকে কুদ্দুসের এক আত্মীয়ের ৮৫০ গ্রামে স্বর্ণ আনেন নূরুল আলম। কিন্তু তিনি পুরো স্বর্ণ বুঝিয়ে না দিয়ে কুদ্দুসকে ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ দেন। বাদীপক্ষ থানার পরিবর্তে পুলিশের অন্য ইউনিট দিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে। আদালত ডিবি পুলিশকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।

গত শুক্রবার বিকেলে নূরুল আলমের থলিয়ারার বাড়িতে সাদাপোশাকে আসে ডিবি। তখন নারীসহ বাড়ির অন্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে এসআই রেজাউল করিম নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যার দিকে পিস্তল তাক করেন। পরে আসামিকে না পেয়ে পুলিশ চলে যায়। ওই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।

নূরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। এনামুলের বাবাকে সৌদি আরবে ব্যবসায় অংশীদার না করায় স্বর্ণ আত্মসাতের মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা করেছে।’ বাদীপক্ষের আইনজীবী শওকত আলী বলেন, আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আসামির উপস্থিতির খবর পেয়ে তিনিসহ তিনজন সাদাপোশাকে থলিয়ারা গ্রামে অভিযান চালান। তখন আসামি বাসায় ছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গেলে বাড়ির নারীসহ অন্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে নারীদের সরিয়ে দিয়ে দরজার দিকে পিস্তল তাক করেন। তাঁরা আসামিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।