চেয়ারম্যান–ইউএনও বিরোধে অচলাবস্থা

এডিপির সোয়া ২ কোটি টাকা জুনের মধ্যে ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখনো প্রকল্প গ্রহণ না করায় এবার এই অর্থ ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা বর্জন করেছেন স্থানীয় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এই সভা হওয়ার কথা থাকলেও কমিটির সভাপতি ও ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান সভায় উপস্থিত না হওয়ায় তা করা যায়নি।

সভা সূত্র জানায়, গতকাল উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছিল। প্রথমে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুন্নবী। পরে দুপুরে একই স্থানে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা হওয়ার কথা থাকলেও সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কে এম মাহফুজ‍ুল ‍আলম সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। একই সঙ্গে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত হলেও বাকি ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন। উপজেলা পরিষদ দুজন ভাইস চেয়ারম্যানও অনুপস্থিত ছিলেন। কোরাম সংকটের কারণে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা করা যায়নি।

উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের একটি সূত্র জানায়, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি খেয়াঘাট রয়েছে। এসব খেয়াঘাট–সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব দিলে ইউএনও তাতে সম্মত হননি। একই সঙ্গে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) কাজ বাস্তবায়ন নিয়েও ইউএনওর সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মতবিরোধ হয়। এর জের ধরেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানরা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা বর্জন করে আসছেন।

ইউএনওর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সব জনপ্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ। আমাদের ন্যূনতম সম্মান দেওয়া হয় না। সবকিছু তিনি একাই করেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ফোন করে জানান। এ রকম তো হতে পারে না।
এ কে এম মাহফুজুল আলম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেহেন্দীগঞ্জ

এদিকে দুটি মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা বর্জন করায় চলতি বছরের এডিপির প্রকল্পগুলো অনুমোদন ও বরাদ্দ দেওয়া আটকে আছে। একই সঙ্গ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দুই মাস ধরে সভায় অংশ না নেওয়ায় উপজেলা পরিষদের অনেক ফাইল আটকে আছে। সমন্বয়হীনতার কারণে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এডিপির প্রায় ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাতের আয় থেকে আরও ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা উন্নয়ন খাতে যোগ হয়ে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। কিন্তু এখনো প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন না হওয়ায় এই অর্থ ব্যয় করা যাচ্ছে না। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী অর্থ বছর শেষ হওয়ার আগে এই অর্থ ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা না হলে এই অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে।

সভায় যোগ দিয়েছিলেন উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের ফরাজী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তিনজন সভায় উপস্থিত ছিলাম। বাকিরা এসেছিলেন, কিন্তু সভায় যোগ দেননি।’ কেন দেননি, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইউএনও সাহেব অন্যায় করেন না। কারও অন্যায় দাবিও পূরণ করতে পারেন না। এর বেশি কিছু বলতে চাই না, বুঝে নিন।’

সভা বর্জনকারীদের মধ্যে আছেন চর এককরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মুকিম তালুকদার। তিনি মেহেন্দীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি। আবদুল মুকিম তালুকদার বলেন, ‘আমরা সভায় যাইনি। ইউএনওর সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ঝামেলা হয়েছে।’ কী ঝামেলা প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘শনিবার আমরা ইউএনও ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে নিয়ে বসব সমঝোতার জন্য।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এডিপির প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা আগামী জুনের মধ্যে ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অর্থবছর প্রায় শেষের পথে। সে ক্ষেত্রে এখনো প্রকল্প গ্রহণ না করায় এবার এই অর্থ ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সভা বর্জনের বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কে এম মাহফুজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএনওর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সব জনপ্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ। আমাদের ন্যূনতম সম্মান দেওয়া হয় না। সবকিছু তিনি একাই করেন। আর সভা ডাকার আগে আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয় না। সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ফোন করে জানান। বৃহস্পতিবার সভায় যোগদানের জন্য আমরা গিয়েছিলাম। সভার আগে আমরা আলোচনায় বসার কথা বলেছিলাম। তিনি বসেননি।’

জানতে চাইলে ইউএনও মো. নুরুন্নবী গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনে নেই, এমন কোনো বিষয়ে একমত হতে না পারাটা অবশ্যই স্বেচ্ছাচারিতা নয়। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে যাতে বাস্তবায়ন হয়, সেটা নিশ্চিত করতে। এ জন্য জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সভা করতে না পারায় এসব কাজ থমকে গেছে।’