দহগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৫০০, শিক্ষক ৫ জন

ইংরেজিসহ আট বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে পারে না।

লালমনিরহাট জেলার মানচিত্র

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০০। কিন্তু শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন। শিক্ষকসংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইংরেজিসহ অন্তত আট বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে পারে না। এই অবস্থা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে দহগ্রাম ইউনিয়নে ২ একর ৫১ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। ১৯৯২ সালের দহগ্রামের বাসিন্দারা দেশের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যাতায়াতের জন্য তিনবিঘা করিডোরের দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি পান। ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। এরপর ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ (সরকারি উচ্চবিদ্যালয়) করা হয়। তখন পাঁচজন শিক্ষককে আত্তীকরণ করা হয়। নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করায় অন্য শিক্ষকেরা বাদ পড়েন। সরকারীকরণের পর বিদ্যালয়ে ২৭ জন শিক্ষকের পদ থাকার কথা। কিন্তু ২২ জন শিক্ষকের পদ ১০ বছরেও সৃষ্টি করা হয়নি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ থাকার কথা সাতটি; সেখানে রয়েছেন দুজন। প্রায় ১০ বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।

চার শিক্ষক দিয়ে ক্লাস সামলানো বেশ কষ্টকর। শিক্ষকেরাই মনোযোগী হতে পারেন না।  একজন শিক্ষককে একাধারে তিনটি ক্লাস সামলাতে হয়।
ফরিদুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ছিল। চলতি বছরের ১৯ জুলাই প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন দীনেশ চন্দ্র রায়।

এই বিদ্যালয়ে গণিতে তিনজন শিক্ষকের প্রয়োজন, সেখানে রয়েছেন একজন। সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে দুইজনের জায়গায় রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। বাংলায় তিনজন শিক্ষকের পদ থাকলেও রয়েছেন একজন। সমাজবিজ্ঞানে দুইজনের জায়গায় একজন ও ব্যবসায় শিক্ষায় দুইজনের জায়গায় একজন শিক্ষক রয়েছেন। তা ছাড়া ১০ বছর ধরে বিদ্যালয়টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক, জীববিজ্ঞান, ইংরেজি, ধর্ম, ভৌতবিজ্ঞান, ভূগোল, চারুকলা, শারীরিক শিক্ষা ও কৃষিশিক্ষা বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে পারছে না। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা ও জাহিদুল ইসলাম জানায়, একজন শিক্ষক এক সঙ্গে তিন-চারটি ক্লাস নেন। একটিতে লিখতে দিয়ে অন্যটিতে যান। এভাবে ভালো পড়াশোনা হয় না। দ্রুত সব পদ ও বিষয়ের শিক্ষক প্রয়োজন।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিরিনা আক্তার ও জিয়ারুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলে, ‘বিজ্ঞান শাখা থাকলেও শিক্ষক নেই। ইচ্ছা থাকলেও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারিনি।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, চার শিক্ষক দিয়ে ক্লাস সামলানো বেশ কষ্টকর। ক্লাসে মনোযোগী করানো তো দূরের কথা, শিক্ষকেরাই মনোযোগী হতে পারেন না।  বাধ্য হয়ে একজন শিক্ষককে একাধারে তিনটি ক্লাস সামলাতে হয়। এভাবে তো পড়ালেখা করানো সম্ভব নয়।

শিক্ষকসংকটের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র রায় বলেন, শুধু শিক্ষকসংকটের কারণে পাঠদানে ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যালয়টির মান নিম্নমুখী হচ্ছে। দ্রুত শিক্ষক পদায়নের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল বারী বলেন, ‘৫ জন শিক্ষক দিয়ে ৫০০ শিক্ষার্থী পড়ানো অসম্ভব ব্যাপার। গত ১৯ জুলাই শিক্ষাসচিব বিদ্যালয়টি পরির্দশন করেছেন ও শিক্ষকসংকটের বিষয়টি নোট করে নিয়ে গেছেন। আশা করছি, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’