রেলস্টেশন আধুনিকায়ন, স্টেশনে সব আন্তনগর ট্রেন থামানো এবং ভারত থেকে রেল ওয়াগনে (পণ্যবাহী ট্রেন) আমদানিকৃত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে দিনাজপুরের হিলি রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় একটি ট্রেন থামিয়ে রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়েন কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আজ রোববার সকাল ১০টায় হাকিমপুর নাগরিক কমিটি নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হাকিমপুর উপজেলা কমান্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধারা, হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারকেরা, রেলস্টেশন ইউনিয়ন শ্রমিক, উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল সোয়া ১০টায় হিলি স্টেশনের দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছালে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ট্রেনটি থামিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট অবরোধ করে রাখেন। এ সময় হাকিমপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়েন। তাঁরা হিলি রেলওয়ে স্টেশনে সব আন্তনগর ট্রেন থামানোসহ ভারত থেকে ওয়াগনে আসা আমদানিকৃত পণ্য খালাসের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের দাবিতে সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়ান মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অন্যরাও।
হিলি রেলওয়ে স্টেশন লাগোয়া হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন রয়েছে। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল হিলি রেলস্টেশনের অস্থায়ী স্টেশনমাস্টার (টিএলআর) নিয়মিত বেতন না পাওয়ার কারণে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এর পর থেকে স্টেশনের উত্তরে বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং দক্ষিণের পাঁচবিবি রেলওয়ে স্টেশন থেকে হিলি স্টেশনে ট্রেন থামা ও ছাড়ার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। এতে হিলি স্টেশনে ডাউন লাইনের ‘বরেন্দ্র এক্সপ্রেস’, ‘রকেট মেইল’ ও আপলাইনের ‘তিতুমীর এক্সপ্রেস’ ট্রেন ২ নম্বর লুপ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। এতে ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
হিলি রেলওয়ে স্টেশনটি দুই দেশের শূন্যরেখা-সংলগ্ন। চোরাচালান ও সীমান্তে নিরাপত্তার অজুহাতে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সন্ধ্যা ছয়টার পর এই স্টেশনে সাধারণ লোকজনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই সঙ্গে ভারত থেকে ওয়াগনে আমদানিকৃত পণ্য খালাসের কার্যক্রম মৌখিকভাবে বন্ধ করে দেয়। ফলে হিলিতে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্টেশনটিতে আগের কার্যক্রমগুলো বহাল করার জন্য গত বছর ৩১ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হাকিমপুর উপজেলা কমান্ড মানববন্ধন হয়। সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হাকিমপুর উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক সফরে হিলি রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন। এখানে তিনি ভাষণও দিয়েছিলেন। স্টেশনটি নিয়ে সরকারের কেন এত অবহেলা। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ও আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। এতে অন্যান্য সীমান্তের চেয়ে এ সীমান্তে চোরাচালান হয় না বললেই চলে। এ ছাড়া সীমান্তে বড় প্রাচীর রয়েছে, এরপরও কেন নিরাপত্তার অজুহাতে হিলি রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন চলাচলে বিজিবির বাধা। দ্রুত এই রেলস্টেশনে আধুনিকায়নসহ সব আন্তনগর ট্রেনের স্টপেজ দেওয়া হোক। শ্রমিকদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হোক।
মানববন্ধনে হিলি-হাকিমপুর নাগরিক কমিটির নেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হিলিতে আন্তনগর ট্রেন থামার বিষয়ে আমরা বারবার শুধু আশ্বাসই পেয়েছি। ট্রেন আজ থামবে, কাল থামবে এই বলে কালক্ষেপণ করা হয়েছে। আর আশ্বাস নয়, আমরা এবার আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনে নেমেছি। খুব দুঃখ হয়। রেলমন্ত্রী আমাদের পার্শ্ববর্তী বিরামপুরের জামাই। শুধু বিরামপুরকে নিয়েই তাঁর স্বপ্ন, হিলিকে নিয়ে তিনি কোনো চিন্তাই করেন না।’