রাস্তাজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, দুর্ভোগ 

একযোগে কয়েকটি সড়কে উন্নয়নকাজ চলায় নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারাক্ষণ লেগে থাকে যানজট, ওড়াউড়ি করে ধুলা।

সিলেট নগরের চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের দরগাগেট এলাকায় কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে। চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকেছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট নগরের পুরাতন মেডিকেল রোড এলাকায় চলাচলের প্রধান সড়কটি খুঁড়ে একটি বক্স কালভার্টের নির্মাণকাজ চলছে। এতে দুই লেনবিশিষ্ট সড়কটির এক লেন বন্ধ ছিল প্রায় দুই মাস। ওই লেনের অংশে কাজ শেষ হলে কয়েক দিন আগে অপর লেনটি বন্ধ করে সেখানে কাজ শুরু হয়। সড়কটির একটি লেন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রাখায় সব সময় লেগে থাকে যানজট। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, পুরাতন মেডিকেল রোডসহ নগরের আম্বরখানা, নাইওরপুল ও দরগাগেট এলাকায় চারটি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ একযোগে চলছে। এতে ওইসব এলাকার একটা অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেনেজ নির্মাণের কাজও চলছে। এসব কাজের কারণে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হচ্ছে।

নগরের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, একযোগে উন্নয়নকাজ চলায় নাগরিকদের ভোগান্তি বেশি পোহাতে হচ্ছে। কারণ, খোঁড়াখুঁড়িতে অনেক রাস্তা সরু হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো সড়কের ওপরে নির্মাণসামগ্রী স্তূপাকারে রাখা হয়েছে। অনেক স্থানে ধীরগতিতে কাজ চলছে। নির্মাণকাজে কোনো কোনো রাস্তায় চলাচলও বন্ধ। এসব কারণে দিন–রাত সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যানজট লেগে থাকছে। এ ছাড়া অনেক এলাকায় ধুলার উপদ্রব বেড়েছে।

আম্বরখানার দোকানদার আক্তার হোসেন বলেন, খোঁড়াখুঁড়িতে বিশেষ করে যানজট আর ধুলার সমস্যায় বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কগুলোর আশপাশের ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ও খানিকটা ভাটা পড়েছে। এ ছাড়া যানজটের অজুহাত দেখিয়ে রিকশাচালকেরাও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দ্রুত উন্নয়নকাজ শেষ করতে পারলে স্থানীয়রা হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। এ ছাড়া সামনেই বর্ষা মৌসুম আসছে। তাই এর আগেই সব উন্নয়নকাজ শেষ করা উচিত।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রিকাবীবাজার-চৌহাট্টা সড়কের পুরাতন মেডিকেল রোড এলাকায় একটা লেন খোঁড়ে বিশাল গর্ত তৈরি করা হয়েছে। সেখানে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। তবে অন্য লেনটি বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। কালভার্ট নির্মাণের ফলে একইরকম যানজট দেখা গেছে আম্বরখানা, নাইওরপুল ও দরগাগেট এলাকায়ও। এসব এলাকার যানজটের প্রভাব আশপাশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেও পড়তে দেখা গেছে।

নগরের হাওলদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা রমাকান্ত রায় বলেন, প্রায় দেড় থেকে দুই বছর ধরে কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া এলাকায় ড্রেনের নির্মাণকাজ চলছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে কাজ চললেও সেখানে নেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এসব মূলত আবাসিক এলাকা। ফলে প্রতিটি বাড়ির বাসিন্দারাই পড়েছেন বেশ বিপাকে। শিশুরা স্কুলে যায়। অভিভাবকদের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকতে হয় সব সময়। রাতের আঁধারে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেশি। সারাক্ষণ ধুলা তো ওড়েই, এ ছাড়া কাজ চলমান থাকায় হাঁটাও কষ্টসাধ্য। কাজও চলছে ধীরগতিতে।

যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান উন্নয়নকাজের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগে পড়ার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নগরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। এতে অনেক এলাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়েছে।

ধীরগতিতে কাজ চলায় দুর্ভোগ বেড়েছে কি না, নগরবাসীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এ অভিযোগ সঠিক নয়। আসলে উন্নয়নকাজের কারণে অনেক এলাকায় টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অনেক সংযোগ লাইন ও পাইপ সরাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এসব কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে দ্রুত মুক্তি দিতে দ্রুতই উন্নয়নকাজ শেষ করার প্রচেষ্টা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের থাকে।