খুন হতে পারেন, এমন আশঙ্কায় ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন সন্দেহের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের নাম

লক্ষ্মীপুরের বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহিরছবি: সংগৃহীত

খুন হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহির। গত শনিবার রাতে তাঁকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেন সন্ত্রাসীরা। মৃত্যুর দুই দিন পর গতকাল সোমবার রাতে আবুল কালামের এই ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে আবুল কালাম খুন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁকে খুন করতে পারেন, এমন ১১ জনের নামও বলে যান তিনি। এই ১১ জনের মধ্যে আবুল কালাম হত্যার অন্যতম অভিযুক্ত কাউছার মানিক ওরফে ছোট কাউছার রয়েছেন।

আবুল কালামের ধারণ করা ৩৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, তাঁর মৃত্যুর জন্য ১১ জন দায়ী থাকবেন। ভিডিওতে আবুল কালাম বলেন, ‘যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।’

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের স্পষ্ট ইঙ্গিত। ভিডিওতে কথোপকথন ও অভিযোগের ধরন দেখে স্থানীয় লোকজনের ধারণা, তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁকে হত্যার নিশানা বানানো হয়েছে। নিজের জীবনের আশঙ্কা থেকেই তিনি মুঠোফোনে ওই ভিডিও ধারণ করেন বলে মনে করছেন স্বজনেরা।

হত্যাকাণ্ডের আধা ঘণ্টা পর অন্যতম অভিযুক্ত কাউছার তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ‘আউট’ লিখে একটি ক্রিকেট খেলার ভিডিও পোস্ট করেন। নিহত ব্যক্তির পরিবার তাঁকে হত্যার অন্যতম দায়ী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে। খুনের মামলায় কাউছারকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।

আবুল কালাম চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চন্দ্রগঞ্জের মোস্তফার দোকান এলাকায় তাঁকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। অভিযুক্ত কাউছার হোসেন স্থানীয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়, তবে তাঁর কোনো পদ নেই। এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি একটি হত্যা মামলারও আসামি। এ ছাড়া ছাত্রদল কর্মী কাউছারের সঙ্গে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ ছিল আবুল কালামের।

মামলায় ‘আউট’ ভিডিও পোস্টকারী ছাত্রদল কর্মী কাউছার মানিক ওরফে ছোট কাউছারসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে নিহত ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভিডিও পুলিশের নজরে এসেছে। খুনের কয়েক দিন আগে ভিডিওটি করেছিলেন বলে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।