পৌরসভার গাড়ি নেই, তবু তেলের জন্য সাড়ে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক মেয়র
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় অবস্থিত আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তার আলী নিয়মবহির্ভূতভাবে পৌর তহবিল থেকে জ্বালানি তেলের খরচ বাবদ ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা নিয়েছেন। অথচ ওই পৌরসভায় সরকারি কোনো গাড়িই নেই । অবৈধভাবে তেল নেওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া ভুয়া কর্মচারী নিয়োগ দেখিয়ে বেতন-ভাতা তুলে নেওয়ায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করা হয়। মামলা দুটির বাদী হয়েছেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান। আসামি মুক্তার আলী আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা আছে। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
দুদক জানিয়েছে, আড়ানী পৌরসভার নিজস্ব কোনো গাড়ি ও চালক নেই। মেয়র থাকাকালে মুক্তার আলী ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার ব্যবহার করতেন। সেই গাড়ির জন্য মুক্তার আলী ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ৭ লিটার করে জ্বালানি তেলের খরচ নিয়েছেন পৌর তহবিল থেকে। মোট ১ হাজার ৮৬৫ দিনের জন্য ১৩ হাজার ৫৫ লিটার তেল খরচ নেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটার তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৯৬ টাকা ১০ পয়সা। এতে তিনি পেয়েছেন ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৮৫ টাকা। এ ছাড়া তিনি ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। তবে অগ্রিমের বিপরীতে কোনো ভাউচারও দাখিল করেননি বা সমন্বয় করেননি।
দুদক আরও জানিয়েছে, পরিপত্র অনুযায়ী ব্যক্তিগত গাড়ি অফিসের কাজে ব্যবহার করতে চাইলে তা পৌর পরিষদ ও সরকারকে অবহিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি প্রতিদিন ৭ লিটার তেল পাবেন। কিন্তু মুক্তার আলী গাড়ি ব্যবহার দেখিয়ে পৌর তহবিল থেকে ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা গ্রহণ করলেও পৌর পরিষদ কিংবা সরকারকে কিছু জানাননি। কোনো লগ বইও লিপিবদ্ধ করেননি। পরিপত্র না মেনে জ্বালানি তেলের টাকা নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।
অন্যদিকে মুক্তার আলী ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে পরিচ্ছন্ন কর্মচারী হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নুরুজ্জামান নাইম, শামীম আহাম্মেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, সঞ্জিব কুমার সাহা, আবু সাঈদ নামের পাঁচজনকে নিয়োগ দেখানো হয়। তাঁদের প্রত্যেকের বেতন দেখানো হয় ৯ হাজার টাকা। বাস্তবে এই ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতা দেখিয়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা তুলে নেন তৎকালীন মেয়র মুক্তার।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে এবং তেলের নামে নিয়ম না মেনে টাকা নিয়ে মুক্তার আলী দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।