বরিশালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত কাউন্সিলরের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

শরীফ আনিছুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালে বহিষ্কৃত মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি করপোরেশনের বর্তমান কাউন্সিলর শরীফ আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ বুধবার দুপুরে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর শাখার ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

গত রোববার মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফ আনিছুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে পরাজিত করতে তাঁর বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমকে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন। এমন অভিযোগ করার পর ওই দিন মধ্যরাতে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। এরপর আজ ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীর পক্ষ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হলো।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. ফারুক হোসেন নালিশি অভিযোগটি গ্রহণের পর তা তদন্ত করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি ইসতিয়াক হোসেন।

মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সদস্য শরীফ আনিছুর রহমানকে। তিনি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য কে এম শরীয়তুল্লাহ জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টায় এ অভিযোগ বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় দিয়েছিলেন তাঁরা। থানায় এ অভিযোগ দেওয়া হলে পুলিশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে দেওয়ার অনুরোধ করে। তাই সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ মামলা করা হয়েছে।

গত রোববার সন্ধ্যায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফ আনিছুর রহমান তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহমুদ তারেকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে সাফিন মাহমুদের বিরুদ্ধে তিনি নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনার পাশাপাশি দলীয় নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তাঁর ছেলে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। সাফিন মাহমুদ বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সংবাদ সম্মেলনে শরীফ আনিছুর রহমান বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তাঁর ছেলে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ হাতপাখাকে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন।

তাঁর ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনার ঝড় ওঠে। এরপর ওই দিন রাতেই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় শরীফ আনিছুর রহমানকে।

মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমের সমর্থন দেখে বিবাদী তাঁর অজ্ঞাতনামা নেতাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভ্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছেন। এতে হাতপাখার প্রার্থী প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। প্রার্থীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ বক্তব্যের কারণে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর মিথ্যা বক্তব্যে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক আদর্শে অন্যায় আঘাত করার কারণে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বিশৃঙ্খল, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

আসামি (শরীফ আনিছুর) ইসলামী আন্দোলনের অনুভূতি ও মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় অপরাধ করেছেন বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়।