ভেঙে গেছে দরজা, সুইচ বোর্ড

কোটালীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার কোটালীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বারান্দায় পাঠদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

হস্তান্তরের আগেই দরজা ভেঙে গেছে। দেয়ালের রঙের প্রলেপ খসে পড়ছে। বিদ্যুতের সুইচ বোর্ড ভেঙে গেছে। বৈদ্যুতিক পাখা, বাল্ব কিছুই লাগানো হয়নি। কাজের মান নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এই দুরবস্থা যশোরের চৌগাছা উপজেলার কোটালীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) চৌগাছা কার্যালয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে এই বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এখানে ১১৯ শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। একটি জরাজীর্ণ ঘরে বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ দাপ্তরিক কাজ চলত।

২০১৮ সালের ২ আগস্ট ৬৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫০ টাকা চুক্তিমূল্যে এই বিদ্যালয়ের একতলা ভবন নির্মাণের জন্য ঝিনাইদহের মেসার্স শহিদুল ইসলাম নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ করছেন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আসাদ চৌধুরী। এক বছর মেয়াদি নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। ভবনটি এখনো হস্তান্তর করতে পারেননি ঠিকাদার।

এই ঘটনায় কোটালীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রায়হান উদ্দীন ভবনের কাজ সঠিকভাবে শেষ করে দ্রুত হস্তান্তরে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছেন।

গত বুধবার বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, নবনির্মিত একতলা ভবনে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। তিনটি কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অপর দুটি কক্ষের দরজা ভাঙা। কয়েকটি জানালার কাচ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড ভাঙা। ভবনের বাইরের পলেস্তারায় দেওয়া রঙের প্রলেপ ঝরে পড়ছে। কোনো কক্ষেই বৈদ্যুতিক পাখা নেই। তৃতীয় শ্রেণির ২৩ শিক্ষার্থী এই ভবনের বারান্দায় মেঝেতে বসে ক্লাস করছে। সহকারী শিক্ষক সোহাগ হোসেন তাদের পাঠদান করছেন।

শিক্ষার্থীরা জানায়, গরমের সময় রোদের তেজ যখন বাড়ে, তখন ও বৃষ্টির সময় বারান্দায় বসে ক্লাস করা যায় না। তখন পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। বারান্দার মেঝেতে বসে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। বেঞ্চে বসে ক্লাস করলে সুবিধা হয়। খাতায় লেখার কাজ বেঞ্চে বসে করলে হাতের লেখা সুন্দর হয়।

বুধবার সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে আধা পাকা একটি ভবনে। এই ভবনে তিনটি কক্ষ রয়েছে। একটিতে পাঁচজন শিক্ষক বসেন। অপর দুটি কক্ষে পাঠদান করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রায়হান উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে একতলা একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ছয় মাস আগে ঠিকাদার ভবনটি বুঝে নিতে বলেন। কিন্তু হস্তান্তরের আগেই ভবনের দরজা ভেঙে পড়ে। রঙের প্রলেপ খসে পড়ছে। যে দরজা লাগানো হয়েছে, তা নিম্নমানের। স্থানীয়ভাবে টিন দিয়ে একটি ভবন নির্মাণ করে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভালো পরিবেশের অভাবে পড়ালেখায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিতে পারছে না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।’

রায়হান উদ্দীন আরও বলেন, ‘পাঠদান চালিয়ে নেওয়ার জন্য ছয়টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে দুটি কক্ষ রয়েছে। যে কারণে আমাদের দুই পালায় পাঠদান করতে হচ্ছে।’

নির্মাণকাজের মান ও অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনাসহ বিভিন্ন কারণে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। নির্মাণকাজ আরও আগেই শেষ হয়েছে। ছয় মাস আগেই ভবন হস্তান্তরের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় তখন সেটা হয়নি। এখন দু–এক দিনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।’