কয়রার জলাশয়ে লাল শাপলার হাসি
আশ্বিনের ভোর। হিমেল বাতাসে দুলতে থাকা লাল শাপলাগুলো যেন পথিককে হাতছানি দিচ্ছে! টলমলে জলের বুকজুড়ে অসংখ্য লাল শাপলা ফুটেছে, চারপাশে গাঢ় সবুজ পাতার গালিচা ছড়িয়ে আছে। দৃশ্যটি যে কারও চোখ জুড়িয়ে দেবে, মন ভরে দেবে প্রশান্তিতে।
এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে খুলনার কয়রা উপজেলার আদালত ভবনের পেছনে। আদালতের পাশে উপজেলা পরিষদের পুকুরঘাটমুখী পাকা পথের বাঁ পাশে বিস্তৃত জলাশয় লাল শাপলায় ছেয়ে আছে। কোলাহলের ভিড়ে এক টুকরো স্বস্তি। ক্ষণিকের জন্য হলেও পথচারীরা সেখানে দাঁড়িয়ে হারিয়ে যান লাল শাপলার মোহনীয়তায়। কেউ দাঁড়িয়েই মুঠোফোনে বন্দী করেন রঙের এই উৎসব, কেউ বসে গল্পে মাতেন।
রোববার সকালে দেখা যায়, পুকুরঘাটে কয়েকজন তরুণ-যুবক আড্ডা দিচ্ছেন। আড্ডার ফাঁকে পলাশ মন্ডল নামে এক তরুণ বলেন, উপজেলা পরিষদের পাশে তাঁদের বাড়ি। আগে কখনো এখানে এত শাপলা দেখেননি তিনি। এখন প্রায় প্রতিদিন ভোরে চলে আসেন শাপলার সৌন্দর্য দেখতে। শাপলা ফুল ভোরে ফোটে, কিন্তু রোদ বাড়তে থাকলে পাপড়ি ধীরে ধীরে মুড়ে নেয়।
কয়রার মদিনাবাদ গ্রামের মনিরুল ইসলাম নামের এক তরুণ বলেন, ‘আমি ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য ভিডিও করতে এসেছি। লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে অনেকেই আসেন।’
কয়রা পল্লিমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল খালেক বলেন, কয়রার অধিকাংশ এলাকায় লোনা পানির চিংড়িঘের থাকায় সচরাচর এভাবে লাল শাপলা ভেসে থাকতে দেখা যায় না। তিনি এখানে শাপলা দেখতে এসেছেন। অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফুলগুলো থাকবে। পরে পানি কমলে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে শাপলা ও শালুকের বীজ। পরের বছর বৃষ্টির পানি পড়লেই সেই বীজ থেকে আবার নতুন শাপলার জন্ম হবে।
কয়রা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাইমুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বে প্রায় ৩৫ প্রজাতির শাপলা আছে। বাংলাদেশে প্রধানত সাদা, লাল ও নীল শাপলা পাওয়া যায়। শাপলা সাধারণত স্রোতবিহীন জলাশয়ে জন্মে, শিকড় পানির নিচে থাকে আর ফুল ডাঁটা দিয়ে ভেসে থাকে। লাল শাপলা শুধু কয়রার আদালত ভবনের পেছনে নয়, এবার অনেক কৃষিজমিতেও জন্মেছে। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, এর ডাঁটা সবজি হিসেবেও খেতে ভালো। লাল শাপলা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়, ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দেয়।