সিলেট বন বিভাগে নেই চিকিৎসক, তিন দিন অসুস্থ থাকার পর মারা গেল বানর
সিলেট নগরের কালাশীল টিলাগড় এলাকার দুইতলা বাসার ছাদে তিন দিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে একটি বানর। বন বিভাগের প্রাণী চিকিৎসক না থাকায় তাৎক্ষণিক বানরটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। এতে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বানরটি উদ্ধারে এগিয়ে যাওয়া জান্নাতুল মৌ নামের এক তরুণী।
গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অসুস্থ বানরটির ব্যাপারে লেখেন এক ব্যক্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি নজরে আসে সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল মৌয়ের। তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলেই বানরটির খোঁজ নিতে যান।
ঘরে বিড়াল ও কুকুর পালতেন জান্নাতুল মৌ, এ জন্য প্রাণীদের প্রতি তাঁর আলাদা মায়া ছিল। জান্নাতুল মৌ বলেন, ফেসবুকে পোস্ট দেখে ছোট বোন সানজিদা ফেরদৌসকে নিয়ে তিনি বানরটি দেখতে গিয়েছিলেন। বানরটি বেশ অসুস্থ ছিল। এতে মায়া লেগে যায় তাঁর। বাসার মালিক বলেছিলেন বানরটি যাতে তিনি নিয়ে যান। কিন্তু বানরটিকে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না।
জান্নাতুল মৌ বলেন, বানরটি উদ্ধার এবং চিকিৎসার ব্যাপারে বন বিভাগের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তেমন কোনো সাড়া পাননি তিনি। এ জন্য পরদিন দুজন প্রাণী চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে খাঁচাসহ গিয়েছিলেন। এ সময় বানরটির জ্বর এবং ঠান্ডায় অবস্থা আরও খারাপ দেখতে পান। প্রাথমিকভাবে ইনজেকশনও দেওয়া হয়। কিন্তু বানরটিকে ছাদ থেকে সরিয়ে আনতে পারেননি। এর মধ্যে বন বিভাগের টিলাগড় বিটের ‘অ্যানিমেল কিপার’ মাসুদ হাওলাদারকে পাঠিয়েছিল বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তিনিও বানরটি উদ্ধার করে বন বিভাগের জিম্মায় নেননি। সেখানেই গতকাল শনিবার বিকেলে বানরটি মারা যায়। বন বিভাগের প্রাণী চিকিৎসক থাকলে আজ হয়তো বানরটিকে বাঁচিয়ে রাখা যেত।
সিলেট বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা (টাউন রেঞ্জ) শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বন বিভাগের নিজস্ব কোনো প্রাণী চিকিৎসক নেই। প্রাণী চিকিৎসক না থাকায় উদ্ধার করা বন্য প্রাণী নিয়ে অনেক অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। বন বিভাগের আওতায় টিলাগড় ইকোপার্কের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে থাকা প্রাণীগুলোর চিকিৎসার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নিতে হয়।
রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, বানরটি উদ্ধার এবং চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একজন সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি নিজেই বাইরে থেকে প্রাণী চিকিৎসকের সহায়তায় চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বন বিভাগ তাঁকে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু বানরটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পরে বন বিভাগের কর্মী বানরটির মরদেহ উদ্ধার করে মাটিচাপা দিয়েছে।