সামান্য মতবিরোধেই গুলি চালান, কেটে ফেলেন পা

লক্ষ্মীপুরে দুই যুগ ধরে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে আসছে এই বাহিনী। এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে বাহিনীপ্রধান কাশেম জিহাদি।

কাশেম জিহাদি
ছবি: প্রথম আলো

ক্রাচে ভর দিয়ে এক পায়ে হাঁটেন সুমন খান (৪২)। পা হারানোর কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ আর্দ্র হয়ে আসে তাঁর। ১৯৯৬ সালের কথা। রাজনীতি নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে সন্ত্রাসীরা তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম খানের দুই ‘চোখ উপড়ে’ ফেলে। বছর পাঁচেক পর বাবার ওপর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন সুমন। এরপর তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ওই সন্ত্রাসীরা। তারা সুমনের ডান পায়ে গুলি করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই পা কেটে ফেলে।

সুমনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তাঁর বাবার চোখ তুলে নিয়েছিল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জিহাদির লোকজন।

তখন সুমনের বয়স ছিল ১৫ বছর। বছর পাঁচেক পর বাবার ওপর হামলার ঘটনায় কাশেম জিহাদির সমালোচনায় সোচ্চার হন সুমন। এর জেরে ২০০১ সালে দ্বিতীয় রমজানের দিন সুমনের পা কেটে ফেলে সন্ত্রাসীরা। পরদিন তাঁর দোকান (রিকশা ও সাইকেলের যন্ত্রাংশের দোকান) লুটপাট করে। দুর্ধর্ষ কাশেম জিহাদি ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পাননি সুমন ও তাঁর পরিবার।

তাঁর বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তাঁর বাবার চোখ তুলে নিয়েছিল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জিহাদির লোকজন।
সুমন,বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে
খোরশেদ আলম
ছবি: প্রথম আলো

সুমনদের গ্রামের চা–দোকানি খোরশেদ আলম (৫৮) এখন চলাফেরা করেন লাঠিতে ভর দিয়ে। ১৯৯৯ সালের ১৩ নভেম্বর একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে দুর্বৃত্তরা তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলে। সেই কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে ওঠেন খোরশেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চায়ের দোকানে বসা নিয়ে জিহাদির সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে কাশেম জিহাদি নিজে তাঁর পা কেটে ফেলেন এবং কাটা পা নিয়ে চলে যান। এই ঘটনায় কাশেম জিহাদিকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছিলেন। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে মামলাটির গতি হয়নি, বিচারও পাননি খোরশেদ।

তুচ্ছ ঘটনায় কিংবা মতবিরোধ হলেই গুলি, পা কেটে নেওয়া, চোখ উপড়ে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নে আরও আছে। গত ২৪ বছরে এই এলাকায় পা কেটে ফেলা হয়েছে তিন ব্যক্তির। একজনের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, গত ২৫ বছরে এই বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন ২৪ জন। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ রাতে বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকার নাগেরহাট সড়কে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৪০) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ জোড়া খুনের পর ১ মে র‌্যাব-১১-এর নোয়াখালী ক্যাম্পের প্রধান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাশেম জিহাদি ৯টি খুনের মামলার আসামি। তিনি ১৯৯৬ সালে নিজের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। তাঁর বাহিনীতে ৩০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। তিনি এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

তবে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কাশেম জিহাদির বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ তিনটি মামলা চলমান। আরও কয়েকটি হত্যা মামলা ও পা কেটে ফেলার মামলা ছিল। কিন্তু সেগুলোর তথ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কে এই জিহাদি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, কাশেম জিহাদি বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন শামীম হত্যা, ২০০০ সালের বিএনপি নেতা আইনজীবী নুরুল ইসলাম, দত্তপাড়া এলাকার আবু তাহের, বশিকপুরের নন্দীগ্রামের মোরশেদ আলম, করপাড়ার মনির হোসেন, উত্তর জয়পুরের সেলিম ভূঁইয়া, কামাল হোসেন এবং সর্বশেষ নোমান ও রাকিব হত্যা মামলা অন্যতম।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও এলাকার একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, কাশেম জিহাদি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৯৬ সালে। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামের কর্মী ছিলেন। এ তথ্য বশিকপুর ইউনিয়ন জামায়াতের একজন সাবেক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কাশেম জিহাদি অনেক আগে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাশেম জিহাদিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
আবুল কাশেম চৌধুরী, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি
সুমন খান
ছবি: প্রথম আলো

বশিকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কাশেম জিহাদি (৫৭) সর্বশেষ চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে ছিলেন। দলের দুই নেতাকে হত্যার পর ১৭ মে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা জানায় চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ। থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কাশেম জিহাদিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীর আসল নাম আবুল কাশেম। ১৯৯৭ সালে ইউপি নির্বাচনের সময় প্রতিপক্ষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তিনি অনুসারীদের কাছ থেকে ‘জিহাদি’ উপাধি পান। এরপর থেকে কাশেম জিহাদি নামেই পরিচিত তিনি।

তাঁর নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী দলের নাম ‘জিহাদি বাহিনী’। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, খুন, ডাকাতি, বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই বাহিনী এলাকায় ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, এ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৩০০।

‘নোমান-রাকিবের হত্যার সাথে আবুল কাশেম জিহাদি সরাসরি জড়িত। বশিকপুরে তিনি অন্তত দুই ডজন খুনের সাথে জড়িত। এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছেন জিহাদি। তিন দশক তিনি বশিকপুরে রাজত্ব করে যাচ্ছেন।’
মাহফুজুর রহমান, নোমানের ভাই

চন্দ্রগঞ্জ থানা ও বশিকপুর আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাশেম জিহাদি অত্যন্ত চতুর ও উগ্র স্বভাবের। তাঁর মতের বিরুদ্ধে গেলেই মানুষের ওপর হামলা চালান। বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত বেশির ভাগ খুনের সময় তিনি ছিলেন বিদেশে। ফলে এলাকায় এমন প্রচার রয়েছে যে তিনি দেশের বাইরে গেলেই কেউ না কেউ খুন হয়।

লক্ষ্মীপুরে একসময় লাদেন বাহিনী, শামীম বাহিনী, নিশান বাহিনী, জিহাদি বাহিনীসহ সন্ত্রাসীদের ১৭টি বাহিনী ছিল। এর মধ্যে ১৬টি বাহিনীর প্রধান ও দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বিভিন্ন সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সেই বাহিনীগুলো এখন অনেকটা নির্মূল হয়ে গেলেও কাশেম জিহাদি ও তাঁর বাহিনী সক্রিয় থাকে। সর্বশেষ দলীয় দুই নেতাকে হত্যার পর এখন অবশ্য কাশেম পলাতক। তাঁর দলের ১৭ জনকে গ্রেপ্তার হয়েছেন এরই মধ্যে।

রাজনৈতিকভাবে প্রশ্রয় না পেলে বশিকপুরে কাশেম জিহাদির মতো সন্ত্রাসীর উত্থান হতো না। দিন শেষে এমন সন্ত্রাসীরা কোনো দলের জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
মো. কামাল হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লক্ষ্মীপুর শাখার সভাপতি

৯ বছর আগে ঢাকায় গ্রেপ্তার

২০১৪ সালের ২৪ জুলাই ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে তদবির করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন কাশেম জিহাদি। ওই সময় পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) শহীদুল হকের কক্ষে যান কাশেম জিহাদি। তখন শহীদুল হক লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপারকে টেলিফোন করে জিহাদি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তাঁর আসল পরিচয় জানতে পারেন। এরপরই শাহবাগ থানার পুলিশকে ডেকে কাশেম জিহাদিকে গ্রেপ্তার করানো হয়। এ নিয়ে ওই বছরের ২৪ জুলাই ‘গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

একের পর এক নৃশংসতা

লক্ষ্মীপুরের মানুষের কাছে গত ২৫ এপ্রিল রাতটা ছিল একেবারে অন্য রকম। ‘রাত ১০টার পর শহরে খবর ছড়িয়ে পড়ে—আবদুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমাম খুন হয়েছেন। প্রথমে কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্ষমতাধর এই দুই নেতা কেন খুন হবেন? কে বা কারা খুন করবে? কার এত সাহস? পরে ছড়িয়ে পড়ে আবুল কাশেম জিহাদিসহ তাঁর বাহিনী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। মুহূর্তের মধ্যে বশিকপুর ইউনিয়নে স্তব্ধতা নেমে আসে।’ গত ৩০ এপ্রিল পোদ্দার বাজারে বসে এই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন বশিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ একজন নেতা।

কাশেম জিহাদি গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। আর তাঁর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান। ওই নির্বাচন নিয়েই কাশেম জিহাদি ও তাঁর বাহিনীর সঙ্গে মাহফুজ-নোমান পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছিল।

নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নোমান-রাকিবের হত্যার সাথে আবুল কাশেম জিহাদি সরাসরি জড়িত। বশিকপুরে তিনি অন্তত দুই ডজন খুনের সাথে জড়িত। এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছেন জিহাদি। তিন দশক তিনি বশিকপুরে রাজত্ব করে যাচ্ছেন।’

লক্ষ্মীপুরের আলোচিত এই জোড়া খুনের মামলায় ১৮ আসামির সবাই জিহাদি বাহিনীর সদস্য বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ১৭ জন গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন প্রধান আসামি কাশেম জিহাদি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দত্তপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আন্তরিকতার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অপরাধীদের শনাক্ত ও তাঁদের অবস্থান চিহ্নিত করতে সময় লাগায় দ্রুত গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি বশিকপুরে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জিহাদি বাহিনীর নৃশংসতার নানা ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল পোদ্দার বাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ওষুধ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে খোকনকে। ওই ঘটনায় মামলা করার সাহস পর্যন্ত পায়নি তাঁর পরিবার। ঘটনার ১০ বছর পরও তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত। খোকনের ছেলে আরমান হোসেনের সঙ্গে দেখা করলে তিনি সন্ত্রাসীদের ভয়ে ওই ঘটনা নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যার পরের বছর, ২০১৩ সালের ১৫ মে খুন হন দত্তপাড়ার ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন শামীম। এ হত্যা মামলায়ও কাশেম জিহাদি ও তাঁর সহযোগীরা আসামি।

হত্যার চেয়েও মানুষের পা কেটে নেওয়ার ঘটনায় এলাকার মানুষ বেশি আতঙ্কিত থাকেন। সুমন খান ও খোরশেদের মতো আরও অনেকের পা কেটে ফেলেছে জিহাদি বাহিনী।

বশিকপুর ইউপির দফাদার ছিলেন আবুল কাশেম। ত্রাণ বিতরণ ও ইউপি নির্বাচন নিয়ে তাঁর সঙ্গেও কাশেম জিহাদির বিরোধ দেখা দেয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ নভেম্বর প্রকাশ্যে জিহাদি ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে দফাদারের ডান পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। পরে তাঁর সেই পা কেটে ফেলতে হয়। কৃত্রিম পায়ে দুর্বিষহ জীবন কাটিয়ে ২০১৯ সালে মারা যান আবুল কাশেম। তাঁর ছেলে মো. রুবেল এখন পোদ্দার বাজারে ব্যবসা করছেন। তিনি জানান, ঘটনার পর তাঁর বাবা কাশেম জিহাদিকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় জিহাদির ভয়ে কেউ সাক্ষী দেননি আদালতে।

জিহাদির বাড়িতে তালা ঝুলছে

পোদ্দার বাজার থেকে রশিদপুর গ্রামে কাশেম জিহাদির বাড়ি প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্বের পথ। সম্প্রতি রশিদপুরে গিয়ে তাঁর বাড়ির খোঁজ জানতে চাইলে অনেকে আঁতকে ওঠেন। বিকেল চারটার দিকে জিহাদির বাড়ির ফটকে গিয়ে দেখা যায়, ১০-১২ জন বসে আছেন। বাড়ির উঠানে যাওয়ার পরপর তাঁরা এই প্রতিবেদককে ঘিরে ধরেন। পরিচয় জানতে চান। উঠান থেকেই ঘরের মূল দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়।

উঠানে দাঁড়িয়েই আবুল কাশেম জিহাদির মুঠোফোনে কল করা হয়। ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে আরও কয়েক দিন ফোন করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

কাশেম জিহাদির বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়েই কথা হয় তাঁর চাচাতো ভাই মো. ইউসুফের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাশেম জিহাদির পরিবার ঢাকায় থাকে। দুই ছেলে বিদেশে থাকেন। আরেক ছেলে ঢাকায় থাকেন। তিনি মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসেন।

বশিকপুর ইউনিয়নে সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যকলাপের ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

জিহাদি বাহিনীর মতো লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাহিনীর জন্ম হয়েছে। ক্ষমতাধর রাজনীতিকেরা নিজেদের প্রয়োজনে এসব বাহিনী তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লক্ষ্মীপুর শাখার সভাপতি মো. কামাল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রশ্রয় না পেলে বশিকপুরে কাশেম জিহাদির মতো সন্ত্রাসীর উত্থান হতো না। দিন শেষে এমন সন্ত্রাসীরা কোনো দলের জন্যই মঙ্গলজনক নয়।