ক্ষয়ে গেছে স্লিপার, বালু–পাথর নেই,ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি

গোয়ালন্দ বাজার থেকে দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন পর্যন্ত চলে গেছে এই রেলপথ। এই রেলপথের অধিকাংশ স্থানে বালু ও পাথর নেই।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার স্টেশন থেকে দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন পর্যন্ত রেলপথের কাঠের স্লিপারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। গতকাল গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশন এলাকায়
প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার থেকে দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রেলপথের স্লিপারগুলো পুরোনো হয়ে ক্ষয়ে গেছে। এই পথের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত বালু ও পাথর নেই। এতে এই রেলপথ দিয়ে ট্রেন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। গত দুই মাসে এ পথে দুই বার দুটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এই পথে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ১৪ অক্টোবর বেলা পৌনে একটার দিকে রাজবাড়ী থেকে আসা দৌলতদিয়া ঘাটগামী নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন গোয়ালন্দ বাজার পার হয়ে পৌরসভার মহাশ্মশান–সংলগ্ন তোরাপ শেখপাড়ায় পৌঁছলে পেছনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

এতে দৌলতদিয়া থেকে গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত কোচটি উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যার পর ইঞ্জিনসহ পাঁচটি কোচ নিয়ে ট্রেনটি রাজবাড়ী স্টেশনে ফিরে গিয়ে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এতে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।

২৮ আগস্ট বেলা সোয়া একটার দিকে দৌলতদিয়া থেকে খুলনাগামী নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন স্থানীয় সুনিপুণ অর্গানিকস এলাকায় পৌঁছলে এর পেছনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

রেলওয়ের রাজবাড়ী প্রকৌশল বিভাগ তৎপরতা চালিয়ে ১১ ঘণ্টা পর দুটি কোচ উদ্ধার করে। পরে ১৫ ঘণ্টা পর এই পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পোড়াদহ থেকে আসা গোয়ালন্দঘাটগামী শাটল ট্রেনটি রাজবাড়ীর পাঁচুরিয়ায় এসে আটকা পড়ে। বিকেলে যাত্রী নামিয়ে আবার পোড়াদহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

রেলওয়ের রাজবাড়ীর লোকো ইনচার্জ ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ১৪ অক্টোবর দুপুর পৌনে একটার দিকে পাঁচটি কোচ নিয়ে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন দৌলতদিয়া ঘাটে যায়। দৌলতদিয়া তোরাপ শেখপাড়ায় পৌঁছলে কোচ এল-৪১২০–এর দুটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর সাড়ে পাঁচটার দিকে কোচটি উদ্ধার হয়। সন্ধ্যার পরই ইঞ্জিনসহ অন্যান্য কোচ নিয়ে ট্রেনটি রাজবাড়ী ফিরে আসে।

দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে রেলওয়ে রাজবাড়ীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ আগস্ট এবং ১৪ অক্টোবর দুটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিন সদস্যের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ বলতে পারবেন।

২৮ আগস্ট দুর্ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান রেলওয়ে পাকশীর সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ বলেন, প্রাথমিকভাবে রেললাইনে পর্যাপ্ত বালু-পাথর না থাকা এবং স্লিপারগুলো পুরোনোসহ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী হুমায়ন আহম্মেদ, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজন জানান, ১৪ অক্টোবর বেলা পৌনে একটার দিকে গোয়ালন্দ পৌরসভার মহাশ্মশান ঘাটের কাছাকাছি নকশিকাঁথা ট্রেনটি পৌঁছলে বিকট শব্দ হয়। পরে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, ট্রেনের পেছনের একটি কোচ লাইনচ্যুত হয়েছে। তবে কোনো ক্ষতি হয়নি। জরাজীর্ণ লাইনের কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, গোয়ালন্দ বাজার থেকে দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন পর্যন্ত ৪ দশমিক ৪২ কিলোমিটার রেলপথের স্লিপারগুলো অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। কিছু স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে। বালু ও পাথর না থাকায় স্লিপার ফাকা হয়ে আছে।