রাতে জানালা দিয়ে নারীদের ভিডিও ধারণ, আতঙ্ক

ঝিনাইদহ জেলার মানচিত্র

রাতে জানালা খুলে ঘুমাতেন অনেক নারী। মুঠোফোন দিয়ে ওই নারীদের ভিডিও ধারণ করতেন কেউ। নারীরা গভীর ঘুমে থাকলে শ্লীলতাহানিও করতেন। দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি।

সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের দিবাগত রাতে ছবি তোলার সময় ওই ব্যক্তিকে দেখে ফেলেন এক ব্যক্তি। কৌশলে তিনি পালিয়ে গেলেও ফেলে যান তাঁর মুঠোফোন। ওই মুঠোফোনে গ্রামের বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভিডিও পাওয়া গেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার একটি গ্রামে। ঘটনার পর ওই এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

গ্রামবাসী জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁরা চিহ্নিত করতে পারেননি। মুঠোফোনটি পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সাইবার অপরাধ দল ঘটনাটি তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার তিনজনকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে এখনো মামলা হয়নি।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুবই আপত্তিকর। আপাতত বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। পুলিশের সাইবার অপরাধ দলে বিষয়টি তদন্তে কাজ করছেন। এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।

সরেজমিনে এলাকার বাসিন্দারা জানান, নারীরা ঘুমানোর পর তাঁদের ঘুমন্ত অবস্থার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হতো। এমনকি জানালা দিয়ে নারীদের শরীরে হাত ও লাঠি দিয়ে খোঁচা দেওয়া হতো। নারীরা টের পেয়ে চিৎকার দিলে ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যেতেন।

আবদুল মান্নান বিশ্বাস নামের গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, গ্রামে দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে গ্রামের যুবকেরা বিষয়টি নজরদারি করতে থাকেন। কিন্তু পাহারা দিয়েও তাঁকে ধরা যায়নি।

ফেরদৌস বিশ্বাস নামের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিন রাত তিনটার দিকে ঘরের জানালা দিয়ে কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করার চেষ্টা করছিলেন। এতে তাঁর ঘুম ভেঙে গেলে তিনি ওই ব্যক্তির হাতে আঘাত করেন। তখন মুঠোফোনটি ঘরের ভেতরে পড়ে গেলেও ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান। তাঁর মুখ গামছা দিয়ে বাধা ছিল।

ফেরদৌস আরও বলেন, ওই ব্যক্তির ফেলে যাওয়া মুঠোফোনে গ্রামের অনেক নারীর বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পাওয়া গেছে। কিন্তু কাজটি কে করেছেন, সেটা জানা যাচ্ছে না। মুঠোফোনের তথ্য দিয়েও তাঁরা বের করতে পারেননি।

গ্রামের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি টিটু সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ওই মুঠোফোনের মালিককে খুঁজতে তিন দফা বৈঠক করেছেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। শেষে ২৬ এপ্রিল ফোনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তিনি বলেন, পুলিশ তৎপরতা শুরু করেছে। এক কিশোরসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে গেছে। ঘটনার পর গ্রামে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। রাতে মা-মেয়েরা চলাফেরায় ভয় পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক নারী জানান, রাতে ঘুমালে জানালার কাছে এসে কেউ ফোনের আলো জ্বালান। চোখে আলো লেগে অনেক সময় তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। মাঝেমধ্যে লাঠি বা হাত দিয়ে শরীরে খোঁচাও দেওয়া হয়। টের পেয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যান।