অর্ধেক পণ্যেই পকেট ফাঁকা

গাইবান্ধায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের সমস্যা বেশি হচ্ছে।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গাইবান্ধার বিভিন্ন হাটবাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বেশি। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজার ও হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা, ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতি কেজি রসুন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, প্রতি হালি লেবু ১৫ থেকে ২৫ টাকা, প্রতি কেজি আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি কেজি আদা ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৪৮০ থেকে ৫৭০ টাকা, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা হয়েছে। পাশাপাশি খেজুর ও মসলার দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।

তবে এই সময়ে মুরগির দাম কমেছে। শহরের পুরাতন বাজার ও হকার্স মার্কেটে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ১৯০ টাকা এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।

গতকাল বিকেলে গাইবান্ধা শহরের হকার্স মার্কেটে বাজার করতে আসেন মোহাম্মদ আলী (৫৭)। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি গ্রামে। তিনি শহরের ডিবি রোডে তাঁর পানের দোকান আছে। বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অল্প বেতনের চাকরি করতাম। গত বছর অবসরে যাই। বর্তমানে শহরের ডিবি রোডের ফুটপাতে পানের দোকান দিয়েছি। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। গতকাল রমজানের বাজার করতে এসে অবাক হলাম। প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাড়ি থেকে বাজারের জন্য জন্য যে টাকা এনেছিলাম, তা দিয়ে অর্ধেক বাজারই করতে পারলাম না। পরিবারকে গিয়ে কী বলব!’

একই মার্কেটে আসা শহরের সুখনগর এলাকার চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাকরিজীবী। সারা বছর সবকিছু কিনে খেতে হয়। যে টাকা নিয়ে গতকাল বাজারে এলাম, তা দিয়ে সবকিছু কেনা যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে অল্প অল্প করে জিনিসপত্র কিনলাম।’ তিনি অভিযোগ করেন, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই বাজারের ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বললেন, ‘আমরা জিনিসের দাম বাড়াইনি। বেশি দামে সবকিছু কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

এই বাজার থেকে শহরের পুরাতন বাজারে গিয়েও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেল। পুরাতন বাজারে আসা গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের কৃষক কাশেম মিয়া বলেন, ‘দাম কম হবে, এই আশায় পাইকারি বাজারে এলাম। কিন্তু গরুর মাংস, মসুর ডাল, আলু, রসুন, সয়াবিন তেল বেশি দামে কিনতে হলো। কেবল ব্রয়লার মুরগির দাম কম দেখলাম।’

পুরাতন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সাজু মিয়া বলেন, দাম কমে গেছে। ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভিন বলেন, রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে প্রতিদিনই বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। দাম বাড়ানোর কারণে দুই দিনে জেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তারপরও কেউ দাম বাড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।