আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ ৫ নেতাকে শোকজ

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ-সদর একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমসহ পাঁচজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।

অভিযুক্ত প্রত্যেককে আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সশরীর অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে হাজির হয়ে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠন করা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. সোহাগ তালুকদার স্বাক্ষরিত নোটিশ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুর রশিদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের শোকজ করা হয়। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. রাশেদ শমসের; মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও কালীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি (একাংশ) গোলাম রসুন; কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ওহিদুজ্জামান এবং কালীগঞ্জ উপজেলা পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমদাদুল হক। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে নির্বাচন–পূর্ব অনিয়মের অভিযোগ করে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ১০ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ পৌরসভা মিলনায়তনে এক সমাবেশে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের উপস্থিতিতে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের বলেন, ‘মুজিব কোট পরে যদি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চান, এই কোট জনতার মাঝে খুলে নেওয়া হবে।’ একই সভায় শ্রমিক লীগ নেতা গোলাম রসুন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মানুষ হয়ে নৌকায় ভোট না দিলে ভোটের মাঠে যাওয়ার দরকার নেই।’ আওয়ামী লীগ নেতা ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করলে ক্ষমা করা হবে না।’ একই সভায় অভিযুক্ত ইমদাদুল হক বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কেউ ভোট করলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে এবং আমার ইউনিয়নে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল আজীম উপস্থিত থাকার পরও ওই সব বক্তব্য দিতে বাধা না দেওয়ায় তিনিসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একক ও সমষ্টিগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ২০০৮–এর ৪ (১), ১১ (ক) ও ১২–এর লঙ্ঘন করেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এ অবস্থায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১-এর কার্যালয়ে সশরীর অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় নোটিশে।

আচরণবিধির ৪ (১) ধারা অনুযায়ী, সরকারি ডাকবাংলো, সার্কিট হাউস বা কোনো সরকারি কার্যালয়কে কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ১১ (ক) ধারা অনুসারে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য বা কোনো ধরনের উসকানিমূলক কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। আর আচরণবিধির ১২ ধারা অনুযায়ী ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ আগে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।

কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মো.ওহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নোটিশ পেয়েছেন। যথাসময়ে তাঁরা এই নোটিশের জবাব দেবেন।