বড়ালের বুকে এখন ধানখেত

নাটোরের আটঘরি থেকে বনপাড়া পর্যন্ত নদের ১৮ কিলোমিটার দখল হয়ে গেছে। নদ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

একসময়ের খরস্রোতা বড়াল নদ শুকিয়ে গেছে। নদের ভেতর চাষ হচ্ছে ধান। গতকাল চাটমোহর উপজেলার রামনগর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদ এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় কিছুটা পানির দেখা মেলে। কিন্তু শুকনা মৌসুমে নদে পানি থাকে না। নদটির বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির নেতাদের দাবি, নদে পানির প্রবাহে বাধা কিছুটা দূর হয়েছে। তবে নাটোরের আটঘরি থেকে বনপাড়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নদ পুরো দখল হয়ে গেছে। আর এ কারণেই নদ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

এ সম্পর্কে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান বলেন, ‘বড়ালের আড়াআড়ি বাঁধ অপসারণের পর আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু উৎসমুখ দখলমুক্ত না হওয়ায় সেই স্বস্তি আর নেই। নাটোরে বড়াল নদের ১৮ কিলোমিটার উদ্ধার না করলে নদে পানির দেখা মিলবে না। তাই আমরা নদের ওই অংশ উদ্ধারের দাবি করছি। এই দাবি পূরণ হলে ২২০ কিলোমিটার বড়াল সচল হবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বড়াল সচল ছিল। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা থেকে বড়ালের উৎসমুখে ও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দহপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দুটি জলকপাট নির্মাণ করে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নৌযান চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন নদ পারাপারের জন্য সেতু তৈরির দাবি করেন। কিন্তু সেতু নির্মাণ না করে বড়ালের চাটমোহর অংশে চারটি আড়াআড়ি বাঁধ তৈরি করা হয়। এতে বড়ালে পানিপ্রবাহ আরও আটকে যায়। দিনে দিনে দখল-দূষণে ২২০ কিলোমিটার বড়াল পরিণত হয় মরা খালে। পানি না পেয়ে ব্যাহত হতে থাকে বিস্তীর্ণ চলনবিলের চাষাবাদ।

২০০৮ সালে বড়াল রক্ষায় তৈরি হয় আন্দোলন কমিটি। সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পর উচ্চ আদালত বড়াল থেকে সব বাঁধ ও জলকপাট অপসারণের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধ চারটি অপসারণ করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

বড়ালে দুই দিক থেকে পানি প্রবেশ করে। এর মধ্যে প্রধান উৎস রাজশাহীর পদ্মা নদী। আরেক দিকে রয়েছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী থেকে যমুনা নদী। বর্তমানে যমুনা থেকে বড়ালে কিছুটা পানি প্রবেশ করছে। পদ্মা থেকে পানি আসতে পারছে না।

চাটমোহর উপজেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদ। নদের অন্য পাশে গ্রাম। দুই পারের বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বেইলি সেতু। গত শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বেইলি সেতুর নিচে কোনো পানি নেই। পুরো নদে ধানের আবাদ করা হয়েছে। পুরোটাই সবুজ খেত।

চাটমোহরের বোথর বাজারের বাসিন্দা আবদুল মোতালেব বলেন, ‘যে বড়ালে লাউ (নৌকা) ছাড়া চলা যাতো না, বড়াল এহন পানির অভাবে খাঁ খাঁ করে।’

এ সম্পর্কে পাউবোর নাটোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ১০৪ কিলোমিটার নদ খননের জন্য ২ হাজার ১৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি দুই বছর ফাইলবন্দী ছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি ফাইল আবার সচল হয়েছে।