সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগ
গাড়াদহ ইউনিয়নে প্রকল্পের ১৪টি ঘরের মধ্যে ৭টি ঘর ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ঘরগুলো ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর স্ট্যাম্পে সই করে সুবিধাভোগীরা অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘরের মধ্যে ৭টি ঘর ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যরা ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ঘরগুলো কিনে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, ঘর বিক্রির বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। প্রাথমিকভাবে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। শিগগিরই তাঁরা মাঠে গিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিণপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প–২–এর অধীনে ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। একটি ঘর নির্মাণে সরকারের বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পাশাপাশি ঘরের জন্য জমি বরাদ্দ আছে ২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত শাহজাদপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৫১টি ঘর সুবিধাভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে এই ঘর বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
সম্প্রতি দক্ষিণপাড়ায় গিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকার প্রকল্পের ১৪ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পান আবদুস সালাম ও সেলিনা দম্পতি। অথচ ঘরটিতে এখন বসবাস করছেন শিরিনা বেগম ও তাঁর পরিবার। শিরিনা বলেন, এ ঘর তিনি এক লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন। এ জন্য স্ট্যাম্পে সইও দিয়েছেন।
আবদুস সালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ঘর বিক্রির বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। ঘর বিক্রির একটি টাকাও তাঁরা পাননি। সব স্থানীয় ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের (কেজি স্কুল) পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ নিয়েছেন। তিনিই এসব বিষয়ে জানেন।
এ বিষয়ে ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ বলেন, ‘একটি ঘর কেনাবেচার সময় আমি মধ্যস্থতায় ছিলাম। তবে কোনো টাকার বিষয়ে আমি জানি না।’
১০ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন বেল্লাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী সারা খাতুন। বর্তমানে এই ঘর ৮০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন মো. আনু ও সাবিনা বেগম দম্পতি। আনু বলেন, এ বাড়ির মালিক বেল্লাল হোসেনের গাড়াদহ ফুটবল খেলার মাঠের পাশে বড় বাড়ি রয়েছে। তাঁরা সেখানে থাকেন।
সাবিনা বেগম বলেন, ‘আমাগোর ঘরবাড়ি কিছু নাই, আমাগোর কোনো মানুষ নাই, তাই দৌড়াদৌড়ি করেও একটা ঘর পাই নাই। এহুন ঋণ কইরা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর কিনা থাকছি।’
এ বিষয়ে বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টিই আমি জানতাম না। যারা বরাদ্দ দিয়েছে, তারাই আবার ঘরটি বিক্রি করেছে। আমি কোনো টাকা পাইনি।’
১৬ নম্বর ঘর বিধবা রেশমা খাতুন বরাদ্দ পেলেও সে ঘর এক লাখ টাকায় কিনে হাফিজুল ইসলাম ও নাছিমা খাতুন বসবাস করছেন। এভাবে ৮, ৯, ১৩ ও ১৭ নম্বর ঘরও বিক্রি হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ। যাঁদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, কেবল তাঁরাই ঘরে বসবাস করতে পারবেন। ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।