টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৩৪

টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জেলা শহরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে তাহিরপুর থানা প্রাঙ্গণে
ছবি: সংগৃহীত

সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার দুপুরে তাঁদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।

পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা হাওরে বেড়ানোর অসিলায় এখানে গোপন বৈঠক ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে এসেছেন। জননিরাপত্তা বিঘ্নিত ও মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, এসব শিক্ষার্থী গতকাল রোববার সকালে তাহিরপুর উপজেলা আসেন। সেখান থেকে একটি হাউসবোট নিয়ে তাঁরা টাঙ্গুয়ার হাওরে যান। তাঁরা হাউসবোট নিয়ে দিনভর হাওরে ঘুরেন। বিকেলে হাওরের উত্তর পাড়ে সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট এলাকায় যাওয়ার পথে পুলিশ দুটি স্পিডবোটে গিয়ে তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রোববার বিকেল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত থানা-পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও এ বিষয়ে পুলিশ কোনো তথ্য জানায়নি।

তবে এ ব্যাপারে একজন পুলিশ কর্মকর্তা আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ যাচাই-বাছাই করতে পুলিশের সময় লেগেছে। অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁরা সবাই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেই এখানে এসেছেন। যাতে কেউ সন্দেহ না করে এ জন্য তাঁরা বেড়ানোর ছলে হাওরে এসেছেন।

আজ দুপুরে করা মামলার বাদী হয়েছেন তাহিরপুর থানার উপপরিদর্শক মো. রাশেদুল কবির।

গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের ২৪ জনই বুয়েটের। অন্যরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী আফিফ আনোয়ার, বখতিয়ার নাফিস, মো. সাইখ, ইসমাইল ইবনে আজাদ, সাব্বির আহম্মেদ, তাজিমুর রাফি, মো. সাদ আদনান, মো. শামীম আল রাজি, মো. আবদুলাহ আল মুকিত, মো. জায়িম সরকার, হাইছাম বিন মাহবুব, মাহমুদুর হাসান, খালিদ আম্মার, মো. ফাহাদুল ইসলাম, তানভির আরাফাত, এ টি এম আবরার মুহতাদী, মো. ফয়সাল হাবিব, আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী, আলী আম্মার মৌয়াজ, মো. রাশেদ রায়হান, সাকিব শাহরিয়ার, ফায়েজ উস সোয়াইব, আবদুর রাফি ও মাঈন উদ্দিন। অন্যরা হলেন আবদুল বারি, মো. বাকি বিল্লাহ, মাহাদি হাসান, টি এম তানভির হোসেন, আশ্রাফ আলী, মো. মাহমুদ হাসান, মো. এহসানুল হকন, রাইয়ান আহম্মেদ, তানিমুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ মিয়া।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মোমতাজুল হাসান আবেদ প্রথম আলোকে বলেন, এসব শিক্ষার্থীকে আটকের পর ঢাকা থেকে জানানো হয়, এখানে তাঁদের সংগঠনের দু–একজন কর্মী আছেন। তাঁরা হাওরে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু রোববার বিকেল থেকে যোগাযোগ করেও তাঁদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদ ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলার বিষয়টি প্রথম আলো নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।