জীবিত থেকেও ভোটার তালিকায় মৃত, উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত সন্তান

দিনমজুর মো. ইয়াসিন
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের বীর দক্ষিণ পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ইয়াসিন (৫৩)। পেশায় দিনমজুর ইয়াসিন জীবিত থাকলেও হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। ওই ভুলের কারণে ইয়াসিনের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলে হুমায়ূন উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আজ রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ইয়াসিন ভোটার তালিকায় মৃত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। ইয়াসিনের ছেলে হুমায়ূন স্থানীয় সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।

শিক্ষক ও ভুক্তভোগী দিনমজুরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার জন্য অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম শুরু হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই কার্যক্রম চলে। অন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য অনলাইনে ইনপুট দেওয়া সম্ভব হলেও বিপত্তি বাধে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমায়ূন মিয়ার ক্ষেত্রে। বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় ওই শিক্ষার্থীর তথ্য ইনপুট দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে সে উপবৃত্তি পাবে না।

ভুক্তভোগী মো. ইয়াসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পাঁচ সদস্যের সংসার। কাম-কাজে না গেলে খাওন জুডে না। রবিবার দুপুরও উপজেলা ইলেকশন অফিসও আইয়া জানতাম হারছি, আমি নাকি মইরা গেছি। যারা এই কামডা করছে, হেরার ভুলে আমার ছেড়া গত বছরও উপবৃত্তির টেহা পায় নাই। আমি এই ঘটনার জড়িতরার শাস্তি চাই।’

সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাধবী রাণী দে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহানূর আলম ওই কার্যক্রমের দায়িত্বে আছেন।’

সহকারী শিক্ষক শাহানূর আলম বলেন, উপবৃত্তি পেতে হলে নতুন শিক্ষার্থীদের তথ্য অনলাইনে ইনপুট করতে হয়। এ জন্য শিক্ষার্থীর মা–বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন ও অভিভাবকের মুঠোফোন নম্বরের প্রয়োজন পড়ে। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র হুমায়ূনের বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রে সমস্যা থাকায় অনলাইনে ইনপুট হয়নি। এ জন্য ওই শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময়ও উপবৃত্তির টাকা পায়নি। ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে তাঁরা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সেজাউল করিম বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় নতুন ভোটার ও মৃত ভোটারদের তথ্য বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সংগ্রহ করা হয়। যাঁরা কাজটি করেছেন, সম্ভবত তাঁরাই ভুল করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় বা সার্ভারজনিত সমস্যার কারণেও এমনটি হতে পারে। আমি এখন দাপ্তরিক কাজে এলাকার বাইরে আছি। এ–সংক্রান্ত আবেদন পেলে দ্রুত সংশোধন করে দেওয়া হবে।’