শিক্ষার্থীরা মাটির ব্যাংকের টাকা দিল অসুস্থ এক বাবার সেবায়

মাটির ব্যাংকটি তুলে দেওয়া হয় এক শিক্ষার্থীর মায়ের হাতে। রোববার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিফিনে বাঁচানো টাকা জমা রাখার জন্য মাটির ব্যাংক রয়েছে। সেই মাটির ব্যাংকটির নাম ‘শিশু সঞ্চয় ব্যাংক’। এই ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষ, বন্ধু ও সহপাঠীকে সহায়তা করা হয়।

সর্বশেষ গতকাল রোববার দুপুরে এক শিক্ষার্থীর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় মাটির ব্যাংকটি। ওই শিক্ষার্থীর অসুস্থ বাবার চিকিৎসার জন্য ব্যাংকটি দেওয়া হয়। পরে ব্যাংকটি ভেঙে গুনে দেখা যায়, ১৩ হাজার ৬১০ টাকা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন বলেন, সহায়তার এ অর্থ সামান্য হলেও আশার কথা যে এটা বছর বছর বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে ইতিবাচক মনোভাবও বাড়ছে, তা বোঝা যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের সমাবেশে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বুদ্ধ করেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরাও ওই তহবিলে অর্থ সহায়তা দেন। বিশেষ করে যখন কাউকে এ সহায়তার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়, তখন সব শিক্ষক তাৎক্ষণিক ওই তহবিলে অর্থ দেন। ওই সময় উপস্থিত অভিভাবকেরাও অর্থ সহায়তা করেন। এলাকার বেশির ভাগ অভিভাবকই গরিব। তবু শিক্ষার্থীরা সঞ্চয় ব্যাংকে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জমা দেয়। বিষয়টি অনেক আনন্দদায়ক।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শহীদুল হুদা ও এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি খাইরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুনসহ অন্য শিক্ষকেরা। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানায়, অসহায় সহপাঠীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে তাদেরও ভালো লাগছে।

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস ও মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ২০২০ সালে মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর কাজটি শুরু করা হয়। প্রথমবার করোনাকালে মাটির ব্যাংক ভেঙে এলাকার এক অসহায় নারীর চিকিৎসার জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়। ২০২২ সালে সিলেটে বন্যার্তদের জন্য বন্ধুসভার ত্রাণ তহবিলে এ মাটির ব্যাংক থেকে দেওয়া হয় সাড়ে সাত হাজার টাকা। চলতি বছরের গোড়ার দিকে বিদ্যালয়ের এক অসুস্থ ছাত্রের চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের বাবা পঙ্গু হয়ে যান। সেই বাবার চিকিৎসার জন্য মাটির ব্যাংক ভেঙে দেওয়া হলো ১৩ হাজার ৬১০ টাকা।