কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সংসদ সদস্য শহিদের উপহার দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সের মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা

সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল
ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল ২০১৭ সালে একটি অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভাকে উপহার দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করেছে রায়পুর থানা–পুলিশ। এরপর ওই অ্যাম্বুলেন্সের কাগজপত্র দেখানোর জন্য পুলিশ পৌর কর্তৃপক্ষকে তিন দিনের সময় দিয়েছিল। তবে আজ রোববার পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। পুলিশের দাবি, অ্যাম্বুলেন্সের প্রকৃত মালিক একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী।

মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এ মামলায় তাঁকে ২৭ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানাও করা হয়েছে। কুয়েতের এক আপিল আদালত মানব পাচারের মামলায় দেওয়া রায়ে কারাদণ্ড শেষে কাজী শহিদ ইসলামকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কাজী শহিদ ইসলামকে ২০২০ সালের ৬ জুন রাতে তাঁর কুয়েত সিটির বাসা থেকে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা আটক করেন। কুয়েতে শহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। একটি মামলা হয় ঘুষ লেনদেন ও মানব পাচারের অভিযোগে এবং অন্যটি করা হয় অর্থ পাচারের অভিযোগে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে মানবসেবার জন্য ২০১৭ সালে কাজী শহিদ ইসলাম রায়পুর পৌরসভাকে অ্যাম্বুলেন্সটি উপহার দেন। তবে সম্প্রতি একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মোকলেছুর রহমান গত বছরের ২১ আগস্ট একটি অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করেন। ওই জিডিতে দাবি করা হয়, অ্যাম্বুলেন্সের মালিক মোকলেছুরের স্ত্রী নিগার সুলতানা ওরফে রুমি। এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য পৌরসভাকে যেই অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছেন, সেটির ইঞ্জিনের নম্বরের সঙ্গে নিগার সুলতানার অ্যাম্বুলেন্সটির মিল আছে। পরে ওই জিডির সূত্র ধরে অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

কাজী শহিদ ইসলামের উপহার দেওয়া সেই অ্যাম্বুলেন্স এখন পুলিশি হেফাজতে
ছবি: প্রথম আলো

পুলিশ জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা মোকলেছুর অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়ায় খাটানোর জন্য কুমিল্লার মেঘনার মানিকারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে দিয়েছিলেন। পরে জাকিরের কাছ থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্স এনে শহিদ ইসলাম রায়পুর পৌরসভায় সেটি উপহার দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিলেও কাগজপত্র না দিয়ে কাজী শহিদ প্রতারণা করেছেন বলে জানিয়েছেন রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট। তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে শহিদ ইসলাম অ্যাম্বুলেন্স পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে উপহার দিয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সটি তিনি উপহার দিলেও এর কোনো কাগজপত্র দেননি। এখন এটি জব্দ করায় সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্সটি উপহার দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু মোকলেছুর রহমান জিডি করেছেন ২০২২ সালের ২১ আগস্ট। প্রায় পাঁচ বছর তিনি (মোখলেছুর) তাহলে কোথায় ছিলেন! বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। ধোঁয়াশার মধ্যে আছে পুরো বিষয়টি।’

মোকলেছুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৪ লাখ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি কিনেছিলাম। পরে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়ায় খাটানোর জন্য দিয়েছিলাম। কয়েক মাস ভাড়া দেওয়ার পর আর কোনো ভাড়া দেননি তিনি (জাকির)। অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরত চাইলে সেটিও দেননি। এ নিয়ে থানায় জিডি করি। পরে অন্য একটি গাড়ি চুরি ও প্রতারণার মামলায় জাকিরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারের পর আমার অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে ক্লু পাই। জাকির এখনো কারাগারে।’

লক্ষ্মীপুর-২ আসন (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শহিদ ইসলাম। কুয়েতে কারাদণ্ডাদেশ হওয়ার পর সংসদ সদস্য পদ হারান তিনি। কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে লক্ষ্মীপুরের মানুষ শহিদ ইসলামকে দানবীর হিসেবে জানতেন। এলাকার লোকজন জানান, ১৯৮৯ সালে একটি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার (শ্রমিকদের তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে চাকরি নিয়ে কুয়েতে যান শহিদ। তখন তিনি ছিলেন অনেকটা নিঃস্ব। ১৯৯০ সালে ইরাকের কুয়েত দখলের কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শহিদ আবার কুয়েতে যান।