খুলনার কয়রা
গাছ কেটে বাঁধ সংস্কার
কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে গত মাস থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। বন বিভাগ বাধা দিলেও গাছ কাটা বন্ধ করেননি পাউবোর ঠিকাদার।
খুলনার কয়রায় চর বনায়নের গাছ কেটে বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রাম এলাকায় গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাঁধ সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে হাজারখানেক গাছ কাটা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঁধ রক্ষায় ঢাল হিসেবে কাজ করে চর বনায়নের গাছ। এ ছাড়াও পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠেছে এ বন। প্রথমে বাঁধ নির্মাণের জন্য চরের মাটি ব্যবহার করতে শত শত গাছ কাটা শুরু করেন শ্রমিকেরা। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ ডিসেম্বর সামাজিক বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন গাছের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়। এ সময় সেখান থেকে কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি জব্দ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছে। এরপরও ঠিকাদারের লোকজন গাছ কাটা বন্ধ করেননি।
গত শনিবার হরিহরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের পাশ থেকে কয়েকটি এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। কপোতাক্ষ নদের চর থেকে মাটি কাটার সময় এসব যন্ত্র দিয়ে উপড়ে ফেলা হচ্ছে গাছ। এ ছাড়া নদের চর দিয়ে এক্সকাভেটর নিয়ে যাওয়ার জন্য বালু ভরাট করে পথ তৈরি করা হচ্ছে। এতে অসংখ্য গাছের শাঁসমূল চাপা পড়েছে।
হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণা মন্ডল বলেন, ‘নদের ঢেউ থেকে রক্ষায় ঘূর্ণিঝড় আইলার পর সামাজিক বন বিভাগ থেকে গাছগুলো লাগানো হয়েছে। অনেক বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা গাছগুলো দেখাশোনা করছেন। একেকটি গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। সেখানে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয়। হঠাৎ গাছগুলো কাটতে দেখে অবাক হয়েছি।’
একই এলাকার কবিতা রানী মন্ডল বলেন, ‘ঝড়ের সময় চরের বড় বড় গাছ অনেকটা ঢাল হিসেবে আমাগে রক্ষা করে। গাছগুলো এভাবে কাটা ঠিক হলো না। এ ছাড়া বাঁধ টিকিয়ে রাখতে গাছের প্রয়োজন। খুব কষ্ট করে গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। গাছ কাটা দেখে খুব খারাপ লাগছে।’
ফকিরচাঁদ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা আগে দেখেছি, বাঁধ সংস্কার করতে কোদাল দিয়ে কাজ করতে। এতে গাছের কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু এখন দেখছি, মেশিন দিয়ে বাঁধ সংস্কার করার জন্য গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। যন্ত্রের সাহায্যে বাঁধের ঢাল থেকে মাটি কাটছে।’ এতে বাঁধের স্থায়িত্ব থাকে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা-২ বিভাগের অধীনে কয়রার ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে দুটি গুচ্ছে প্রায় ৮ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। পাউবো সূত্র জানায়, প্রায় ২৬ কোটি টাকা চুক্তিমূল্যে এটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোং। ১৫ ডিসেম্বরে তারা কাজ শুরু করে। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হরিহরপুরের কাজ তত্ত্বাবধানকারী রাসেল হোসেনও গাছ কাটার কথা স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, কাজের স্বার্থে কিছু গাছ কাটতে হচ্ছে।
গাছ কেটে বাঁধ সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘বাঁধের প্রশস্ততা বেশি হওয়ায় এক্সকাভেটর চালানোর জন্য বালু ভরাট করে জায়গা তৈরি করতে হচ্ছে। যে কারণে গাছগুলো কাটা পড়েছে। এ ব্যাপারে আমরা বন বিভাগের সঙ্গেও কথা বলেছি। বাঁধ নির্মাণ শেষে আবারও চরে গাছ লাগানো হবে।’
সামাজিক বন বিভাগের কয়রা উপজেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তা শফিউর রহমান বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণে চরের গাছ কাটার জন্য পাউবো কর্মকর্তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফের চর বনায়ন করা হবে, এটা তাদের ব্যাপার। আমরা তাদের গাছ কাটা বন্ধ করতে বলেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়েছে।’