আড়াই মাস পরও ভরাট হয়নি সেই সড়কের গর্ত  

পিচঢালাই উঠে খোয়া বের হয়ে গেছে। গাড়ি চলাচল করছে হেলেদুলে। ধুলা উড়ে আশপাশের বাড়িঘর ভরে যাচ্ছে। এটা সাতক্ষীরা শহরের শহীদ রীমু সরণির (কলেজ সড়ক) বর্তমান অবস্থা। অথচ এটি সাতক্ষীরা পৌরসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। 

গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে সাতক্ষীরা-২ আসনের (সদর) সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান এ সড়ক নিয়ে বলেছিলেন, সড়কটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী ওই রাস্তায় চলাচল করলে পথেই ‘ডেলিভারি’ (সন্তান প্রসব) হয়ে যাবে। তাঁর বক্তব্য দেওয়ার আড়াই মাস পরও সড়কে কোনো ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়নি।

কবে কাজ শুরু হবে, জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে গেলে, কবে এ সড়কের কাজ শুরু করতে পারব, বলতে পারছি না।’

পৌরসভা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে পুরোনো সাতক্ষীরা হাটখোলা পর্যন্ত শহীদ রীমু সরণিটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৮১৪ মিটার। ২০১১-১২ সালে সম্পূর্ণ সড়কটি শেষবারের মতো পিচঢালাই করা হয়। একেবারে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০২৩ সালে সড়কটি কিছুটা সংস্কার করা হয়।

গত মঙ্গলবার সকালে দেখা গেছে, সড়ক ভেঙে গর্তগুলো আরও বড় হয়েছে। গাড়িতে এ দুই কিলোমিটারের কম দীর্ঘ সড়ক যাতায়াত করতে গেলে আধ ঘণ্টা সময় লাগছে। ধুলাবালু ওড়ার কারণে সড়কে হেঁটে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌরসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক শহীদ রীমু সরণি। এ সড়কের দুই পাশে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, জেলা ডাকঘর, জেলা জজের সরকারি বাসভবন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর অবস্থিত। এ ছাড়া সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, পল্লিমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়, কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকও আছে এ সড়কে। ফলে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ চলাচল করেন।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমানউল্লাহ হাদি বলেন, শহীদ রীমু সরণিতে অবস্থিত কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৭ হাজার। ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের চলাচল করতে হয়। প্রায় ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। বারবার পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েও কোনো ফল হয়নি।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম বলেন, জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রকল্পের প্রথম দফায় ১৭টি সড়কের কাজের দরপত্র হয় প্রায় আট মাস আগে। রীমু সরণির ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় তালিকার ১৭টি সড়কের মধ্যে ১৫ নম্বরে রয়েছে। ওই ১৭টি কাজ এখনো দরপত্র হয়নি। 

সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, যদি দ্রুত সময়ে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শুরু করতে না পারেন, তবে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে শহীদ রীমু সরণিটি সংস্কার করে চলাচলে উপযোগী করা হবে।

সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের নেতা ও প্রথম আলো বন্ধুসভার সাতক্ষীরার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার বলেন, শহীদ রীমু সরণিটি সংস্কার করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। পৌর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয়, দ্রুত সময়ে সংস্কার করা হবে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ তা করে না।