যেখানে ফোটে তিন রঙের পদ্মফুল

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দোল খাচ্ছে পদ্মফুল। তবে এবার হলুদ প্রজাতির পদ্মফুল কম। গোলাপি ও সাদা রঙের পদ্ম বেশি।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রাম পদ্মবিলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল বিকেলে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ছুটির দিনে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ের পদ্মবিলে তিন রঙের (সাদা, গোলাপি ও হলুদ) পদ্মফুল দেখতে ভিড় করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। গত শুক্রবার বিকেলে পদ্মবিলে এ দৃশ্য দেখা গেছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।

তবে পদ্মবিলকে ঘিরে ওই এলাকায় নৌকার মাঝিরা বাড়তি টাকা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এক পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন, আরেক পাশে কুমিল্লা-সালদা নদী সড়ক। দুই পথের মধ্যবর্তী স্থানে উপজেলার দক্ষিণগ্রাম এলাকার অন্তত ১০ একক জলাশয়ে এই পদ্মফুলের সমারোহ। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দোল খাচ্ছে পদ্মফুল। তবে এবার হলুদ প্রজাতির পদ্ম কম। গোলাপি ও সাদা রঙের পদ্ম বেশি। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় ফুলও অপেক্ষাকৃত কম ফুটেছে।

গ্রামবাসী চাইলে এ বিলের পদ্ম বছরের পর বছর ফুটবে। মানুষ দেখতে আসবে। এখানে হলুদ পদ্ম ফুটেছে। এটা খুব কম এলাকায় ফোটে।
মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা প্রশাসক

নৌকার মাঝিরা বলছেন, ভ্রমণপিপাসু নারীরা পদ্মবিলের মধ্যে নৌকাযোগে ভ্রমণ করতে গিয়ে ফুল ছিঁড়ছেন। এই প্রতিবেদকও গত শুক্রবার বিকেলে কয়েক নারীকে ফুল ছিঁড়তে দেখেছেন।

বুড়িচং উপজেলার পূর্ণমতি গ্রামের বাসিন্দা অনামিকা রানী সূত্রধর বলেন, ‘প্রথমবার পদ্মবিল দেখতে এসেছি। কী সুন্দর!’

ছয়গ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একদল শিক্ষার্থী পদ্মবিল দেখতে আসে। ওই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ , নৌকাভাড়া এক চক্কর জনপ্রতি ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আধা ঘণ্টা ঘুরলে ৩৫০ টাকা। এটা অনেক বেশি।

এই অভিযোগ সত্য বলে জানিয়েছেন সেখানে থাকা অন্তত ১৮টি নৌকার মাঝি। তাঁরা বলেন, নৌকা চালাতে কষ্ট হয়। এটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নয়, লাঠি দিয়ে ঠেলে চালাতে হয়। তাই ভাড়া বেশি।

সড়কপথে নারী-পুরুষেরা ছুটির দিন বিকেলে এখানে আসেন। এখানকার প্রবেশপথটি কাঁচা সড়ক। ভ্রমণপিপাসুদের দাবি, সড়কটি পাকা করা হোক।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসিল আরেফিন ভূঁইয়া বলেন, পদ্মফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে। এই ফুল ফোটে রাতে। ভোর ও সকালের পর রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির আগপর্যন্ত প্রস্ফুটিত থাকে। বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। শরতে অধিক পরিমাণে ফোটে। হেমন্তকাল পর্যন্ত ফুটতেই থাকে। এই ফুল মানবদেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে বেশ উপকারী। বাচ্চারা পদ্মফুলের বিভিন্ন অংশ শখের বশে কাঁচা খেয়ে ফেলে। পদ্মফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera. গোত্রের নাম Nymphaeaceae.

কুমিল্লার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন বলেন, একই বিলে তিন ধরনের পদ্মফুলের দেখা মিলেছে। অন্য কোথাও একসঙ্গে হলুদ, সাদা ও গোলাপি পদ্মফুল সচরাচর মেলে না।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, গ্রামবাসী চাইলে এ বিলের পদ্ম বছরের পর বছর ফুটবে। মানুষ দেখতে আসবে। এখানে হলুদ পদ্ম ফুটেছে। এটা খুব কম এলাকায় ফোটে। এখানকার হলুদ পদ্মফুল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও একদল শিক্ষার্থী গবেষণা করছেন।