‘মা, আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমাদের জন্য দোয়া কোরো। পরবর্তীতে কী হবে, জানি না’—এমন কথা বলে কান্নাকাটি করতে করতে মোহাম্মদ তৌফিক ইসলামের ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলছিলেন তিনি। সর্বশেষ কথা বলেন মা দিল আফরোজের সঙ্গে। এরপর আর কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
খুলনা নগরের ছোট বয়রা এলাকায় বাড়ি তৌফিকের। ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজে (এমভি আবদুল্লাহ) দ্বিতীয় প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন তিনি। যে ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়েছে, তাঁদের একজন তৌফিক। তাঁদের জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ে যাচ্ছিল। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এই জাহাজ পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড।
আজ বুধবার বেলা একটার দিকে তৌফিকের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা দিল আফরোজসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। দিল আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে হলো, কেউ তার (তৌফিক) কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়েছে। এরপর আর কথা বলতে পারিনি। খুব কান্নাকাটি করছিল ছেলেটা।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তৌফিক ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে ক্যাডেট হিসেবে জাহাজে কর্মরত আছেন। তবে ওই জাহাজে এবারই প্রথম গিয়েছেন। ১৬ বছর ধরে জাহাজে জাহাজে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় গেলেও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া এটিই প্রথম। তৌফিকের অপহরণের কথা শোনার পর থেকে পরিবারের সদস্যেরা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন।
পরিবার জানিয়েছে, তৌফিক ইসলামের এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েটির বয়স সাত বছর, আর ছেলেটির বয়স তিন বছর। মা, বাবা, ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যেরা খুলনায় থাকেন। তৌফিক ছয়-সাত মাস পরপর বাড়িতে আসার সুযোগ পান। গত ২৫ নভেম্বর সর্বশেষ বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছেন তিনি।
তৌফিকের স্ত্রী জোবায়দা নোমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে একবার কথা হয়েছিল তৌফিকের সঙ্গে। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, জাহাজ জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তখন থেকেই পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। প্রথম দিকে ঘটনাটি তৌফিকের মা ও বাবাকে জানানো হয়নি। পরে আবার পাঁচটার দিকে ফোন করেন তৌফিক। পাঁচ-ছয় মিনিট ধরে সবার সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি জানান, জলদস্যুরা সবাইকে জিম্মি করে ফেলেছে। এখন জাহাজ সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ সময় সবার কাছে দোয়া চান তৌফিক। সর্বশেষ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর।
জোবায়দা বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে সবাই কান্নাকাটি করছেন। ইফতার, সাহ্রি কেউ ভালোমতো করতে পারেননি। কীভাবে সময় কাটছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। এখন আমরা চাই, দ্রুত যেন তাদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’