শান্তিগঞ্জে প্রার্থী হয়ে আলোচনায় সাবেক মন্ত্রী মান্নানের ছেলে

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের তিন প্রার্থী (বাঁ থেকে) সাদাত মান্নান, আবুল কালাম ও বোরহান উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের ছেলে সাদাত মান্নানসহ আওয়ামী লীগের তিনজন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। ভোটের মাঠে তিন প্রার্থীরই শক্ত অবস্থান আছে। দলের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক বলয়ও আছে প্রার্থীদের। ফলে সেটির প্রভাবও ভোটের মাঠে পড়বে বলে মনে করেন ভোটারেরা।

প্রার্থী সাদাত মান্নান শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দুই প্রার্থী হলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) বোরহান উদ্দিন ওরফে দোলন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদাত মান্নান উপজেলা পরিষদে প্রার্থী হবেন এমন আলোচনা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এলাকায় ছিল না। উপজেলা নির্বাচনের আলোচনা শুরু হলে হঠাৎ করেই তাঁর নাম আসে। যদিও তিনি বাবার নির্বাচনের সময়  এলাকায় কাজ করেছেন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যের একটি ব্যাংকে চাকরি করেছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালামের বাড়ি উপজেলার পাগলা এলাকায়। এক সময় শান্তিগঞ্জ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অংশ ছিল। তিনি তখন থেকেই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একবার শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আগে তিনি এম এ মান্নানের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। মাঝে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার পর এম এ মান্নানের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে।
বোরহান উদ্দিনও এক সময় এম এ মান্নানের বলয়েই রাজনীতি করতেন। দুবার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। একপর্যায়ে তিনিও এম এ মান্নানের কাছ থেকে দূরে সরে যান।

শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনটি এক সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের আসন হিসেবে পরিচিত ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে এখানে উপনির্বাচন হলে তাতে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া এম এ মান্নান। যদিও সেবার তিনি জয়ী হতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকা নিয়ে প্রথম জয়ী হন। পরের তিনটি নির্বাচনেও তিনি জয়ী হয়েছেন। এসব নির্বাচনে নৌকা চেয়েছিলেন আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ। কিন্তু পাননি। মাঝখানে তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দুই উপজেলাতেই দলে এবং দলের বাইরে এম এ মান্নান ও আজিজুস সামাদের নিজস্ব বলয় আছে।

এবারের নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বোরহান উদ্দিন আজিজুস সামাদের বলয়ে ছিলেন। কিন্তু সাদাত মান্নান প্রার্থী হওয়ায় আজিজুস সামাদ সমর্থন দেন আবুল কালামকে। আবুল কালামের পক্ষে এলাকায় এসে তিনি প্রচারণাও চালিয়ে গেছেন।
অন্যদিকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বড় অংশ আছে সাদাত মান্নানের সঙ্গে। অন্য দুজনের সঙ্গে এম এম মান্নানের বলয়ের বাইরে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীরা আছেন। সাধারণ ভোটারেরা বলছেন, এখানে লড়াই হবে ত্রিমুখী।

সাদাত মান্নানের বাড়ি উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামে। একই গ্রামের বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান এবার চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগের দিন ডুংরিয়া গ্রামের মানুষ সাদাত মান্নান ও সিরাজুর রহমানকে নিয়ে বসেন। এরপর গ্রামের মানুষের অনুরোধে সিরাজ সাদাত মান্নানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

বাবা এম এ মান্নানের উন্নয়ন প্রসঙ্গ টেনে সাদাত মান্নান বলেছেন, ‘বাবা চাকরি জীবন থেকেই এলাকার উন্নয়ন, এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। তাঁর চেষ্টায় সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমিও মানুষের কল্যাণেই রাজনীতি করছি। আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এলাকার মুরব্বিরাই নির্বাচনে প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছেন। তাঁরা সবাই আমার পাশে আছেন।’

প্রার্থী বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি রাজনীতির মানুষ। মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকি। হঠাৎ করে ভোটে আসিনি। যেখানেই যাচ্ছি ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি। আমরা চাই ভোট যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। কেউ যেন কোনো পদ ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে।’

চেয়ারম্যান থাকাকালীন এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন দাবি করে প্রার্থী আবুল কালাম বলেন, ‘আমি তো দিনরাত মানুষের পাশে আছি। আওয়ামী আমার রক্তে মিশে আছে। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৫ জুন। উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৪ হাজার ২৮৫ জন এবং নারী ভোটার ৭১ হাজার ৫১০ জন।