সোনারগাঁয়ে পিটুনিতে নিহতদের একজন ১০ মামলার আসামি

পিটুনিতে চারজন নিহত হওয়ার পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন  করা হয়েছে। আজ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বাঘরী এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ডাকাত সন্দেহে পিটুনিতে নিহত চারজনের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম জাকির হোসেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার জামপুর দড়িকান্দী এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল রোববার মধ্যরাতে উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের বাঘরী এলাকায় ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনিতে চারজন নিহত ও একজন আহত হন। আহত মোহাম্মদ আলীকে গুরুতর অবস্থায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আড়াইহাজারের জলাকান্দী গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে।

এ সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি ও মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ১টি ডাকাতির মামলা আছে। জাকির সোনারগাঁয়ের দুর্ধর্ষ ডাকাত সরদার। তাঁর জন্ম উপজেলার জামপুরে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ঘটনাস্থলের পাশের গ্রাম সুখেরটেকে। তাঁর মামা আনোয়ার হোসেনও পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত সদস্য। মামার হাত ধরেই জাকিরের ডাকাতি শুরু। চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ আলীর জবানবন্দি ও প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জাকির হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল রাতে সাতজন ডাকাতির উদ্দেশ্যে ওই বিলে (বাঘরী বড় বিল) জড়ো হয়েছিল।’

শেখ বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, নিহত তিনজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করতে সিআইডি কাজ করছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা হবে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দা ও সোনারগাঁ থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকির হোসেন ২০২২ সালের ৩ মার্চ উপজেলার সাদীপুর গ্রামের নানাখী এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে দুই সঙ্গীসহ পিটুনির শিকার হন। গত বছর উপজেলার মহজমপুর গ্রামে এক পুলিশ পরিদর্শকের বাড়িতে ডাকাতি করার পর গ্রেপ্তার হন। সোনারগাঁয়ের ওই বিলে ২০১৬ সালে গ্রামবাসীর পিটুনিতে একজন নিহত হয়।

আজ সোমবার বেলা ১১টায় কাঁচপুর বাঘরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ বিল থেকে নিহত তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে এসেছে। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেঁতলে গেছে, গায়ের জামাকাপড় ছেঁড়া। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নজুড়ে বিলটির অবস্থান। উত্তরে কাঁচপুর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বন্দরের মদনপুর এবং পূর্বে সাদিপুর ইউনিয়ন। বিলের চারপাশে তিন ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রাম। গতকাল রাত ১০টার পর এসব গ্রামের প্রায় সব মসজিদ থেকে বিলে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন গ্রামবাসী দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিলে নেমে পড়েন। ডাকাতেরা এদিক–সেদিক পালানোর চেষ্টা করলে তাঁদের ধাওয়া দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পিটুনি দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তিনজনের লাশ এবং দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। হাসপাতালে আরেকজনের মৃত্যু হয়।

আজ ঘটনাস্থলে গিয়ে গণপিটুনির শিকার মোহাম্মদ আলীর একটি ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতে আসে। এতে মোহাম্মদ আলী জানান, গতকাল রাত ১০টার দিকে তাঁরা অন্তত সাতজন ডাকাতির উদ্দেশ্যে বাঘরী বড় বিলের বানিয়াবাড়ি এলাকার একটি উঁচু ভিটিতে জড়ো হন। স্থানীয় মানুষের চোখ এড়াতে তাঁরা তিনজন তিনজন করে প্রথমে বন্দর উপজেলার মদনপুর নাজিম উদ্দীন ভূঁইয়া কলেজের সামনে আসেন। সেখান থেকে যান বিলে। বিলে জড়ো হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই আশপাশের মসজিদের মাইকের ঘোষণা শুনে গ্রামবাসী বিলে নেমে আসেন।