সাত্তার মাঠে নেই, পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছেন আ. লীগ-বিএনপির নেতারা

সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে শনিবার আবদুস সাত্তারের পক্ষে এক সভায় অংশ নেন সরাইলের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ২০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার এলাকায় ফিরে আট ঘণ্টার জন্য প্রচারণা চালিয়ে ঢাকায় ফিরে গেছেন। তিনি মাঠে না থাকলেও তাঁর পক্ষে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান এবং বিএনপির সাবেক নেতারা। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট সংগ্রহই এখন তাঁদের লক্ষ্য।

এই আসনের উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তারসহ চারজন প্রার্থী আছেন। অন্য তিনজন হলেন আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি (সদ্য বহিষ্কৃত) ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা ও জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ সরাইলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেটিও খুব বেশি চোখে পড়ার মতো নয়। আর জাকের পার্টির প্রার্থীকে এখনো মাঠে দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আবদুস সাত্তারকে বিজয়ী করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনার প্রথম কাজ ছিল আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকারের নেতৃত্বে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী তা প্রত্যাহার করেছেন। আল মামুন সরকার দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এই আসনে দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, সাত্তারের পথ পরিষ্কার করতে জাতীয় পার্টির দুবারের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধাকে নির্বাচন থেকে সারানো হয়েছে। আশুগঞ্জে সভা করে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

গত ১১ ডিসেম্বর দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। ২৯ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ ছাড়েন সাত্তার। এরপর তিনি আর এলাকায় ফেরেননি। গত ১ জানুয়ারি আবদুর রশিদ নামের এক ব্যক্তি তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ৪ জানুয়ারি ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া বাবার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ২৯ ডিসেম্বর এলাকা ছাড়ার ২০ দিন পর গত ১৮ জানুয়ারি এলাকায় ফেরেন আবদুস সাত্তার। এর আগে অনেকটাই আত্মগোপনে ছিলেন। তাঁর মুঠোফোনও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। এখন মুঠোফোন খোলা পাওয়া গেলেও তিনি কারও ফোন ধরছেন না।

আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া

আওয়ামী লীগ-বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কমিটির কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত সরাইল উপজেলার পরমানন্দপুর হাজী মকসুদ আলী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেন আবদুস সাত্তার। সভায় তাঁর দুই পাশে আওয়ামী লীগের বর্তমান ও বিএনপির সাবেক কয়েকজন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল। বিকেল চারটায় আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীসহ সর্বদলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে ৭টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সরাইল উপজেলা সদরের শহীদ মিনারসংলগ্ন দেওয়ান মোকারম আলী মার্কেটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন। সেখানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুরের নেতৃত্বে এলাকার অন্য জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করেন আবদুস সাত্তার। এ সময় রফিক উদ্দিন কলার ছড়া প্রতীকের স্লোগান দেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের কুট্টাপাড়ার বাসায় যান আবদুস সাত্তার। পরদিন ঢাকায় ফিরে যান তিনি।

আবদুস সাত্তারের ছেলে মাঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আব্বুকে সঙ্গে নিয়ে ওনার (উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম) সঙ্গে দেখা করেছি। দোয়া চেয়েছি। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। মঙ্গলবার আব্বু এলাকায় ফিরবেন।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের সুর পাল্টেছে

এদিকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বারবার বলে আসছিলেন, আওয়ামী লীগের এমন দুর্দিন এখনো আসেনি যে এই আসনে অন্য দলের কোনো প্রার্থীকে দিয়ে নির্বাচন করাতে হবে। কারণ, এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা আছেন।

সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘আমাদের কমপক্ষে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত করাতে হবে।’
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আবদুস সাত্তার অন্য দলের হলেও সৎ, প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতবিদ। আমরা তাঁর নির্বাচন করতেই পারি।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার বলেন, সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। বিএনপি ভোট বানচাল করলে তা প্রতিহত করা হবে। তিনি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে ভোটারদের আহ্বান জানান।

মাঠে নেই বিএনপি

এদিকে দল থেকে বহিষ্কারের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনের এলাকায় আবদুস সাত্তারকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় সরাইল উপজেলা বিএনপি। কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরাই এখন কোণঠাসা। এই আসনের নির্বাচনী এলাকায় কোথাও বিএনপির নেতা-কর্মীদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

সরাইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুজ্জামান লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভোট বর্জনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে তাঁকে প্রতিহত করব। বিএনপির কেউ কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে না। পদধারী কোনো নেতা তাঁর (আবদুস সাত্তার) পাশে নেই।’

এই উপনির্বাচনে অংশ নিতে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। বৈধ ঘোষিত আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। গত ১৮ জানুয়ারি উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির দুবারের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা।