কমিটি প্রত্যাখ্যান করে এক নেতার ‘দুগ্ধস্নানের’ পরদিন ঝাড়ুমিছিল, সড়ক অবরোধ

আজ বেলা ১১টার দিকে নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ুমিছিল বের করেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রায় এক যুগ পর গঠিত হওয়া ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ুমিছিল, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধসহ সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রলীগের একাংশ। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে পাকুন্দিয়া পৌর সদর বাজার এলাকায় এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১২ বছর পর ৫ অক্টোবর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ ওমান খান স্বাক্ষরিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে নাজমুল আলমকে সভাপতি ও মো. তোফায়েল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

আরও পড়ুন

কমিটি ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ। বিক্ষুব্ধ অংশটি আজ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। এর আগে বুধবার রাতেই নবগঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে ইতি টানেন ছাত্রলীগ নেতা মো. আরমিন। আরমিন আহমেদ নবগঠিত কমিটির ১ নম্বর সহসভাপতি ও পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের পাশ থেকে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা ঝাড়ু হাতে মিছিল বের করে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। মিছিল শেষে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীর টায়ার জ্বালিয়ে পাকুন্দিয়া-মঠখলা সড়কের থানা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এ সময় ওই সড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

পরে পাকুন্দিয়া বঙ্গবন্ধু চত্বরে একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সাকিবুল হাসান। সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসেন, নাফিজ আহমেদ, রাকিবুল হাসান, হৃদয়সহ অন্যান্য নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা অবিলম্বে ঘোষিত কমিটি বাতিল করার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রদল, জামাত–শিবির থেকে আসা কর্মীদের অনুপ্রবেশসহ দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এ ছাড়া কমিটিতে বিবাহিত, বয়সোত্তীর্ণ ও মাদকাসক্ত নেতাদের রাখা হয়েছে।

মিছিল শেষে বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন
ছবি: প্রথম আলো

এর আগে মিছিলের সময় শুরুতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম বলেন, টাকার বিনিময়ে বিবাহিত, বয়সোত্তীর্ণ ও মাদকাসক্ত নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ও নবগঠিত কমিটির পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর পর পাকুন্দিয়ায় পরিচ্ছন্ন নেতাদের নিয়ে এযাবৎকালের সবচেয়ে সুন্দর কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে আন্দোলনের নামে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটা খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। যাঁরা এসব করতে ইন্ধন দিচ্ছেন, তাঁরা শুধু ছাত্রলীগ না, পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগকেও কলুষিত করছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে নবগঠিত কমিটির সভাপতি নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনো নৈরাজ্য বর্বরতাকে প্রশ্রয় দেয় না। আজ পাকুন্দিয়া বাজারে জ্বালাও–পোড়াও করে আন্দোলনের নামে যে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, এতে আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই।’ পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাত্র ১৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অচিরেই আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করব। ওই সময় ত্যাগী নেতাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে।’