চট্টগ্রামে উচ্ছেদ অভিযানে হকার-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ

সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধভাবে তৈরি করা স্থাপনা উচ্ছেদ করার সময় হকার ও দোকানমালিকেরা সিটি করপোরেশনের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। আজ বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোড এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হকারদের প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পাঁচ পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। সংঘর্ষ চলাকালে সিটি করপোরেশনের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হকারদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আজ সোমবার ওই এলাকায় ভাসমান হকারদের সরিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, হকার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৮ ফেব্রুয়ারি ফলমন্ডি থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় ফুটপাত থেকে ভাসমান হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। অভিযান শেষে কিছু হকার পুনরায় ফুটপাত দখল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার আবারও উচ্ছেদ অভিযানে যায় সিটি করপোরেশন।

বেলা দুইটা থেকে সিটি করপোরেশনের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ফলমন্ডি থেকে আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় ফুটপাতের বিভিন্ন জায়গা থেকে হকারদের তুলে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়। বেলা তিনটার দিকে নতুন রেলস্টেশন এলাকায় গণশৌচাগারের পাশে রাখা জেনারেটর উচ্ছেদ করতে গেলে কয়েকজন হকার অভিযান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বাধা দেন।

নগর পুলিশের সহকারী উপকমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, জেনারেটরটি জব্দ করে গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় কয়েকজন হকার বাধা দেন। এ সময় হকাররা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

নোবেল চাকমা আরও বলেন, হকারদের বেপরোয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট গুলির নির্দেশ দেন। তখন পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভাঙচুর করা সিটি করপোরেশনের গাড়ি
ছবি: প্রথম আলো

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উচ্ছেদ অভিযানের সময় মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে হকারদের মিছিল চলছিল। নতুন রেলস্টেশন এলাকায় হকারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে মিছিলে থাকা কয়েকজন হকারও সংঘর্ষে যোগ দেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হকারদের কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে স্টেশন রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৫টি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিকেল চারটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট—চৈতী সর্ববিদ্যা, শাহরীন ফেরদৌসী ও আরাফাত রহমান। উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মুহাম্মদ আবুল হাশেম। ফলমন্ডি থেকে অভিযান চালাতে চালাতে তাঁরা নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ড্রাম ট্রাক, পিকআপসহ করপোরেশনের বেশ কিছু গাড়ি ছিল।

ম্যাজিস্ট্রেট শাহরীন ফেরদৌসী বলেন, ‘ফুটপাতগুলো যাতে পুনরায় দখল না হয়, সে জন্য আজ আবার অভিযান চলে। দু-একজন নতুন করে ফুটপাতে বসছিলেন। কিন্তু স্টেশন এলাকায় উচ্ছেদ করতে গেলে বিনা উসকানিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন হকাররা। এ সময় করপোরেশনের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।’

হকাররা জানান, উচ্ছেদের প্রতিবাদে এবং হকারদের পুনর্বাসনের দাবিতে নিউমার্কেট এলাকায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় প্রতিদিনই মিছিল-সমাবেশ করে আসছেন তাঁরা। আজ বিকেলেও মিছিল করছিলেন হকাররা।  

চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নূরুল আলম বলেন, ‘কিছু হকার পুনরায় ফুটপাতে বসেছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকজনকে জরিমানা করেছেন। এর প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করছিলাম। মিছিলে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে হামলা হয়েছে। এতে আমাদের ১০ থেকে ১২ জন হকার আহত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হকারদের পুনর্বাসন চাই। যাঁরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন, তাঁরা বহিরাগত।’