‘২০ বার ঘর ভাঙচি, ২১ বার গড়চি’

যমুনার বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ বালু চরে টিন আর বেড়ার ঘর তুলে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার।

নদীভাঙনের কারণে আবারও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন চরের মানুষেরা। গত বৃহস্পতিবার বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মানিকদাইড় চর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর দুর্গম দলিকার চরে এক বছর আগেও ৩০০ পরিবারের বসতি ছিল। ছিল বসতঘর, মসজিদ, বিদ্যালয়। এখন সে চর ভাঙতে ভাঙতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আশ্রয়হারা লোকজন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কালির চর এলাকায় আশ্রয় নেন। সেখানেও ভাঙন শুরু হলে তাঁরা এখন ঘর বেঁধেছেন বালুচরে। 

গত শুক্রবার মাদারগঞ্জ ফেরিঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঘণ্টাখানেকের পথ পেরোনোর পর দলিকার চরের অবশিষ্ট অংশটুকু চোখে পড়ে। এরপর আরও এগিয়ে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার টগার চরে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ বালু চরে টিন আর বেড়ার ঘর তুলে কোনোরকমে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। অনেকে এখনো নৌকায় করে টিন আর তাঁদের জিনিসপত্র নিয়ে আসছে।

ধু ধু বালুচরে কোনোরকমে এসে উঠেছেন। ঘরে খাবার নাই, নদীতে মাছ নাই। আধা পেট খেয়ে দিন যাচ্ছে।
আলেক শেখ, টগার চর বাসিন্দা

দলিকার চরের বাসিন্দা এবং চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদুল ইসলাম বলেন, এক বছর আগে দলিকার চর যমুনায় বিলীন হয়। এরপর প্রায় ৩০০ পরিবার ঠাঁই নেয় যমুনা পারের প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কালিরচরসংলগ্ন নতুন চরে। গেল বর্ষায় সেখানেও নদীভাঙন শুরু হয়। ধীরে ধীরে সেখান থেকেও বসতি সরিয়ে নিতে হয়। সে আশ্রয় হারিয়ে চরের প্রায় ৩০০ পরিবার এখন টগার চরে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে। 

টগার চরে ঘর তোলা আমির শেখ (৭১) বলেন, ‘২০ বার ঘর ভাঙচি, ২১ বার গড়চি। পরথম আচলাম বনসার চরত, তারপর রায়পুর, মানিকদাইড়, মূলবাড়ি। ফের মানিকদাইড় হয়্যা ঘর করিচনু দলিকার চরত। সেডাও ভাঙে এখন টগার চরত।’

বাসিন্দারা বলেন, এক মাস আগেও দলিকার চরের লোকজনের বসতি ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে। এখন তা বিলীন হয়ে গেছে। এখন তাঁদের সংসার চলে যমুনায় মাছ ধরে। এখন যমুনায় পানি কম, মাছও মিলছে কম। একদিকে নদী ভাঙন, আরেকদিকে ঘরে অভাব। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। সংসার চালাতে এই চরের কিশোর-তরুণেরা ধান কাটতে ছুটেছেন বিভিন্ন জেলায়।

বৃদ্ধা লাইলী বেগম (৬৬) বলেন, ‘চরত খাবার পানি নেই, বাথরুম করার সমস্যা। খুব কষ্ট হচ্চে’। 

টগার চরের আলেক শেখ (৭১) বলেন, ধু ধু বালুচরে কোনোরকমে এসে উঠেছেন। ঘরে খাবার নাই, নদীতে মাছ নাই। আধা পেট খেয়ে দিন যাচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, দলিকার চর বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ওই চরের লোকজন কালিরচরসংলগ্ন (মানিকদাইড়ের) কাছাকাছি একটি চরে এক বছর ধরে বসবাস করতেন। নদীভাঙনে নতুন করে আশ্রয় হারিয়ে তাঁরা আবার ঘর-বাড়ি সরিয়ে ফেলেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন চরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।