বিএনপির সম্মেলনস্থল থেকে প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্যজন সভাপতি
কুমিল্লার লালমাই উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী শাহজাহান মজুমদারকে সম্মেলনস্থল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিমের নির্দেশে তাঁকে তুলে নিয়ে যান মাসুদের সমর্থকেরা। পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাসুদ করিমকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার লাকসাম সদরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন শাহজাহান। তিনি লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক।
গতকাল বিকেল চারটার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগঞ্জ টিএ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ সম্মেলন হয়। এতে একই সঙ্গে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
শাহজাহান মজুমদার ও তাঁর অনুসারীদের অভিযোগ, মাসুদের লোকজন সম্মেলনস্থল থেকে শাহজাহান ও তাঁর প্রস্তাবকারী গোলাম আজম মজুমদারকে মারধর করে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে কুমিল্লার পরানপুর এলাকায় নিয়ে যান। পরে শাহজাহানকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাগমারা বাজার এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর সমর্থকেরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।
সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান বলেন, ‘আমাকে ভোটে পরাজিত করা সম্ভব নয় জেনেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসুদ করিম ও তাঁর অনুসারীরা অপহরণ করেছে। পরে একতরফাভাবে মাসুদকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। আমি এ সম্মেলন মানি না। নতুন করে লালমাই উপজেলা বিএনপির সম্মেলন করার দাবি জানাই।’ তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি ৩৬ বছর ধরে মনিরুল হক চৌধুরীর সঙ্গে রাজনীতি করছি। ২৫ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আছি। গণতান্ত্রিকভাবে সভাপতি পদে ভোট করতে চেয়েছিলাম, এটাই কি আমার অপরাধ?’
অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হওয়া মাসুদ করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহজাহানের এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি নাটক সাজাচ্ছেন। সম্মেলনে হাজারো নেতা-কর্মী ছিলেন। কেউ বলতে পারবে না যে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে।’ মাসুদের দাবি, তিনি আগে শাহজাহানকে ইউনিয়ন আহ্বায়ক করেছিলেন। পরে তাঁকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি করা হয়নি বলে ক্ষুব্ধ হয়ে শাহজাহান উপজেলা সভাপতির মনোনয়নপত্র কেনেন। ‘নির্বাচন হলেও আমি বিপুল ভোটে জয়ী হতাম,’ বলেন মাসুদ।
জানতে চাইলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলী আক্কাস গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে শাহজাহান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। ঘটনা সত্য হলে তা দুঃখজনক। তবে সম্মেলনস্থলে তাঁর নাম কয়েকবার ডেকেছি, তিনি সাড়া দেননি। পরে শুনেছি, রাতে তাঁদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এরপর অন্য প্রার্থী না থাকায় সভাপতি পদে মাসুদ করিমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শাহজাহান আগে বিষয়টি জানালে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া যেত, প্রয়োজনে সম্মেলনের স্থানও পরিবর্তন করা যেত।’