ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে অচলাবস্থা, শতবর্ষী আদম আলীর অপেক্ষা বাড়ল

আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কারণে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না আজ। বাধ্য হয়ে আদালতের বারান্দায় অপেক্ষা করছেন শতবর্ষী আদম আলী। বুধবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আদম আলীর বয়স ১০৫। বয়সের ভারে ন্যুব্জ আদম আলী মারামারির মামলা নিষ্পত্তির শুনানির জন্য নাতিকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে এসেছেন। বুধবার সকাল নয়টার দিকে তাঁকে আদালত প্রাঙ্গণে বসে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কারণে শতবর্ষী আদমের অপেক্ষা বাড়ল।

আদম আলীর বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার গুকর্ণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে। আদালত থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। আদালতে আসতে তাঁদের দুজনের খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা। ফিরতেও একই খরচ। খরচের কথা ভেবে তিনি বাড়ি ফিরে যেতে রাজি হননি। নাতি অনেক বুঝিয়েছেন, আজ আদালতে কাজ হবে না। বাড়ি ফিরে যাওয়াটাই ভালো। কিন্তু বৃদ্ধ আদম আলী কাজ না সেরে বাড়ি ফিরে যেতে রাজি নন।

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে বদলি ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ থেকে জেলার সব ধরনের আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন আইনজীবীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার আইনজীবীদের সাধারণ সভা শেষে বেলা তিনটার দিকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বৃদ্ধ আদম আলীর কথা হয়। শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া আদম আলীর কাছে আদালতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একসময় বড় গিরস্থ (কৃষক) ছিলাম। অনেক জমি ছিল। ছেলেরা সব শেষ করতাছে। আমার দুই ছেলে আর পাঁচ মাইয়া। সবার বিয়া অইছে। নাতি-নাতিনদের ঘরে পুতিনও অইছে। এরাও বড় অইতাছে।’

আরও পড়ুন

আদম আলী বলতে থাকেন, ‘আমার ছেলের ঘরের একটা নাতি আছে। নাম রানা মিয়া। তার মাথায় একটু সমস্যা আছে। মারামারি করছিল। পাশের বাড়ির আফজাল মিয়ার বউ ইসমত আরা বাদী অইয়া মামলা দিছে। আমারেও আসামি করছে। ৫-৬ বছর ধইরা ঘুরতাছি। শেষ অই না। আইজ শেষ অউনের কথা। অনেক ট্যাহা খরচ কইরা অনেক কষ্ট কইরা আইছিলাম। অহন হুনছি কাম অইব না। তার ফরও অফেক্ষা করতাছি। যদি মায়া অই তাইলেত শেষ অইব। আসা-যাওয়ার কষ্ট আর খরচ খেইক্কা বাঁচুম। নাতি আমারে ফালাইয়া কইজানি গেছে গা।’

বৃদ্ধ আদম আলী আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘গেরামের মানুষ ঝগড়া করে গোসসা করে। অহন দেহি এইখানেও এই কাজ হয়। আমার মামলাডা শেষ কইরা দিলেইত আর আমি আইতাম না। আমার মামলাডা আইজ শেষ অইবত।’

আরও পড়ুন

আদম আলীর আইনজীবী গোলাম কাদির ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালের একটি ফৌজদারি মামলায় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আদম আলীকেও আসামি করা হয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আজ মামলার শুনানিতে অংশ নিতে পারছেন না। জেলা আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা সব ধরনের আদালত বর্জন করেছেন।