রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলেকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় আটক যুবক সম্প্রতি পরিবারটির সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হুমকি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার পর রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমানকে (সুমন) ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারও (৪৪) আহত হন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত লিমন মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। আহত হওয়ায় তাঁকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জিডিতে তাসমিন নাহার তাঁর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সিলেট নগরের জালালাবাদ থানার খাদরা মডেল টাউনের কথা উল্লেখ করেন। অভিযুক্ত লিমন মিয়ার (৩৫) ঠিকানা উল্লেখ করা হয়, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভবানিগঞ্জ এলাকা।
জিডিতে তাসমিন নাহার উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ার সূত্র ধরে লিমন মিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। লিমন মিয়া আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় মুঠোফোনে প্রায়ই তাসমিন নাহারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাইতেন। একপর্যায়ে প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে সহযোগিতা চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর লিমন মিয়া মুঠোফোনে কল দিয়ে হুমকি প্রদান করেন। সবশেষ ৩ নভেম্বর সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে লিমন মিয়া তাসমিন নাহারের মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল করে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের লোকজনদের হত্যার হুমকি দেন। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় তিনি জিডি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ মুবাশ্বির প্রথম আলোকে বলেন, ‘জজ স্যারের স্ত্রীকে ওই যুবকটি দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত করত। ভয় দেখিয়ে ম্যাডামকে (জজের স্ত্রী) ব্ল্যাকমেল করে টাকা দাবি করছিল। কিছুদিন আগে (৬ নভেম্বর) ম্যাডাম সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তাঁর মেয়েকে দেখতে আসেন।’
ওসি বলেন, ‘ম্যাডাম সিলেট আসার খবর পেয়ে ওই যুবকও সিলেটে আসে এবং সিনক্রিয়েট (অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি) করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যুবককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ম্যাডাম ওই ঘটনায় জিডি করেছেন, মামলা করেননি। তাই পুলিশ ওই যুবককে জিডির বিপরীতে গ্রেপ্তার দেখাতে পারেনি। তবে ওই যুবককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।’
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারকের পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী হিসেবে আটক যুবক বিচারকের বাসায় ঢোকার সময় ভবনের দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম লিখেছেন লিমন। ‘বিচারকের ভাই’ পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচতলার ফ্ল্যাটে যান।
ভবনটির দারোয়ান মেসের আলী বলেন, ওই যুবককে তিনি আগে কখনো দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি ঢুকতে দেন। তবে তার আগে নাম ও মুঠোফোন নম্বর লিখিয়ে নেন। বেলা আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী তাঁকে এসে জানান, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলেকে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তাঁরা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত পান। এরপর তিনজনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি চালক। তাঁর সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে। কেন এই ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁরা এখনো বিস্তারিত জানেন না।