মৌলভীবাজারে সংরক্ষিত বাঁশমহালে আগুনের ঘটনায় বিট কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ধলছড়া সংরক্ষিত বাঁশমহালের মাকালজোড়া অংশ
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারে বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের আওতাধীন ধলছড়া সংরক্ষিত বাঁশমহালের একাংশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় সমনভাগ বিটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার এ ঘটনা তদন্তে বন বিভাগ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। গতকাল শনিবার রাতে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তৌফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি বড়লেখা রেঞ্জের সমনভাগ বিটে ঘটেছে। তাই এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সেখানকার বিট কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলামকে বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একই ঘটনায় বন বিভাগের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সমনভাগ বিটের পুরো এলাকায় আছে ধলছড়া বাঁশমহাল। এ জায়গার আয়তন ১ হাজার ৮০০ একর। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা মাকাল, মূলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। এ ছাড়া সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীও বাস করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি শ্রমিকদের দিয়ে মহালের মাকালজোড়া অংশের কিছু স্থানে বাঁশ ও গাছপালা কাটতে শুরু করেন। পরে শ্রমিকেরা তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে কাটা বাঁশ ও গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সমনভাগের বিট কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম ১১ মার্চ এ ব্যাপারে বড়লেখা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঁশমহালের আশপাশের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন বাসিন্দা বলেন, মাকালজোড়া অংশে বন বিভাগ প্রায় ২০ হেক্টর (প্রায় ৫০ একর) টিলাভূমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে আগরগাছের বাগান তৈরির উদ্যোগ নেয়। বনায়নে উপকারভোগীর সুবিধা পেতে স্থানীয় কিছু স্বচ্ছল লোক বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে স্থানটি ফাঁকা করতে শ্রমিক নিয়োজিত করেন।

তবে প্রত্যাহার করে নেওয়া সমনভাগের বিট কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম দাবি করেন, মাকালজোড়ায় সামাজিক বনায়নের তথ্যটি সঠিক নয়। কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভে গেছে দেখতে পান।

বন বিভাগের বড়লেখার রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, ধলছড়া বাঁশমহালে আগুন লাগানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা তাঁকে আগে কিছু জানাননি। বিভিন্ন সূত্রে ঘটনাটি জেনে সহকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এর আগেই কিছু জায়গা পুড়ে যায়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাঁশমহালের প্রায় ৫ একর এলাকার গাছপালা পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি
ছবি: প্রথম আলো

তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তকালে জিপিএসের (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) মাধ্যমে ১ দশমিক ৮৫ হেক্টর (প্রায় ৫ একর) জায়গা পোড়া দেখা গেছে। বনভূমি জবরদখলের উদ্দেশে কেউ এ কাজ করতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।