সখীপুরে সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে ১৬ এপ্রিল উপজেলা  চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল একটি সড়কের কাজ বন্ধ করে দেন।

সখীপুর পৌরসভার উত্তরা মোড়-আন্দি পুকুর পাড় পর্যন্ত সড়কের নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকেলে মহিলা কলেজ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌর শহরের উত্তরা মোড় থেকে উপজেলার আন্দি গ্রামের পুকুরপাড় পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ৮০০ মিটার পাকা সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। দরপত্র দাখিল করে মূলত কাজটি পেয়েছেন টাঙ্গাইল শহরের মোল্লা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি কিনে বাস্তবায়ন করছেন সখীপুরের মেসার্স হাসিব এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার বাদল মিয়া। 

ঠিকাদার বাদলের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে গত ১৬ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল নিজেই কাজটি বন্ধ করে দেন। ওই সড়কের মতো উপজেলায় এলজিইডির অন্তত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের মূল ঠিকাদারেরা কাজ না করে ক্রয় করা ঠিকাদারেরা কাজ করায় কাজের মান ভালো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

উপজেলা এলজিইডির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এলজিইডির গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও টাঙ্গাইল প্রজেক্টের ৮৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল ঠিকাদারেরা কাজ না করে সেটি স্থানীয় ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এদিকে বিটুমিনসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় কাজের মান ঠিক রাখতে পারছেন না ক্রয় করা ঠিকাদারেরা। ফলে তাঁরা লোকসান এড়াতে বাধ্য হয়ে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া ক্রয় করা ঠিকাদারেরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় কাজের মান খারাপ হলেও এলজিইডির প্রকৌশলীরা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। 

উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বেতুয়া গ্রামের সিকদার বাড়ি-খলিল মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত ৭০০ মিটার সড়ক নির্মাণের কাজ পেয়েছেন ভুয়াপুরের একজন ঠিকাদার। ৭৬ লাখ টাকার কাজটি ওই ঠিকাদার বিক্রি করে দিয়েছেন বেতুয়া গ্রামের সেলিম সিকদার ও হারুন মিয়া নামের দুই ঠিকাদারের কাছে। 

গতকাল শুক্রবার সকালে ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, আনুমানিক ওই সড়ক নির্মাণের ইতিমধ্যে ৫০ ভাগ কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। ১৫ দিন ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কাজের মান তেমন সন্তোষজনক নয়। ঠিকাদার এলাকার হওয়ায় তাঁকে কিছু বলাও যাচ্ছে না। 

এ প্রসঙ্গে ক্রয় করা ঠিকাদার হারুন মিয়া বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে আমি নিজেই আমার বাড়িতে যাব। আমার ঐকান্তিক চেষ্টায় এ সড়কটি অনুমোদন হয়েছে। লটারিতে আমি কাজটি পাইনি। পেয়েছেন ভুয়াপুরের একজন ঠিকাদার। ওই ঠিকাদারের নামও আমার জানা নেই। তারপরও আমার নিজের সড়ক হিসেবে এ কাজটি আমিই করছি। মানসম্পন্ন কাজ করার চেষ্টা করছি।’ উপজেলা ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাজের গুণগত মান নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা প্রশ্ন তুলেছেন। প্রকৃত ঠিকাদার ওই কাজটি করলে হয়তো মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলত না। 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বন্ধ করা ওই সড়কের ঠিকাদার বাদল মিয়া বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান কাজটি বন্ধ করে দেওয়ার পর এখন মানসম্মতভাবে কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছি।’ 

উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ হোসেন বলেন, ‘মূল ঠিকাদারের চেয়ে ক্রয় করা ঠিকাদারের কাজ নিশ্চয়ই খারাপ হবে। তারপরও আমরা চেষ্টা করি কাজটি যাতে মানসম্পন্ন হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা সফল হই, অনেক ক্ষেত্রে আমরা পারি না।’ 

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ‘৮৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ২০-২৫টির কাজ মূল ঠিকাদারেরা করছেন না। কাজটি যে ক্রয় করা, এটা আমরা বুঝতে পারি, কিন্তু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। কারণ, কাগজে-কলমে মূল ঠিকাদারই কাজটি বাস্তবায়ন করেন। আমরা মূল ঠিকাদারের অনুকূলেই বিল দিই। কাজের মান খারাপ হলে মূল ঠিকাদারকেই আমরা দোষারোপ করি। মূল ঠিকাদারের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে তিনি স্বীকার করেন ক্রয় করা কাজের মান নিঃসন্দেহে ভালো হয় না।’ 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল বলেন, ক্রয় করা ঠিকাদার কখনো মানসম্পন্ন কাজ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে এলজিইডির প্রকৌশলীদের সতর্ক থাকতে হবে।