তিতাসের পাইপলাইন থেকে গ্যাস নয়, বের হচ্ছে পানি

পুরোনো পাইপলাইনে বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র রয়েছে। যখন গ্যাস থাকে না, তখন ছিদ্রগুলো দিয়ে পাইপলাইনের ভেতর পানি ঢুকে পড়ছে।

তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকের রাইজারের ভেতর থেকে পানি বের করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এক মাস ধরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চারটি এলাকায় তিতাসের পাইপলাইনে জ্বালানি গ্যাসের সরবরাহ নেই। পাইপলাইনে গ্যাসের পরিবর্তে পানি বের হচ্ছে। অনেকে তিতাসের স্থানীয় কার্যালয়ে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে নিজেরাই পাইপলাইনের রাইজার খুলে পানি বের করছেন। এরপরও পুরোপুরি পানি বের করা যাচ্ছে না। পানিতে গ্যাসের পাইপলাইন ভরে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ সস্তাপুর, সস্তাপুর, ইসদাইর, কোতালেরবাগসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনে পানি পাওয়া যাচ্ছে। পাইপলাইন পানিতে ভরে থাকায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ওই চার এলাকার ১০ হাজারের বেশি গ্রাহক গ্যাসের পাইপলাইনের ভেতরে পানি থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁরা গ্যাস পাচ্ছেন না।

পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে পানি ঢোকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনার রশিদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তিতাসের পুরোনো পাইপলাইনে বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র রয়েছে। যখন গ্যাস থাকে না, তখন ছিদ্রগুলো দিয়ে পাইপলাইনের ভেতর পানি ঢুকে পড়ছে। আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে পানি আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় পাইপলাইনে ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকছে অভিযোগ দিলে ছিদ্র মেরামত ও কমপ্রেশার দিয়ে পাইপলাইনের ভেতর থেকে পানি পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। তিতাস গ্যাসের এই কর্মকর্তা আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের পুরো গ্যাস নেটওয়ার্কে নতুন করে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে গেছে।

দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী মার্জিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা গ্যাস–সংকটে ভুগছি। তখন গভীর রাতে গ্যাস পেলেও এক মাস ধরে তিতাসের পাইপলাইনে আমরা কোনো গ্যাস পাচ্ছি না। পাইপলাইন দিয়ে শুধু পানি বের হচ্ছে। কয়েক দফা নিজেদের উদ্যোগে পাইপলাইনের ভেতর থেকে পানি বের করা হলেও দু-এক দিন গ্যাস পেলেও আবার তা পানিতে ভরে যাচ্ছে।’

একই রকম ভোগান্তির কথা জানান ওই এলাকার বাসিন্দা হালিম শেখ। তিনি বলেন, তাঁদের এলাকায় তিতাসের মূল পাইপলাইনের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছিদ্র। সেই ছিদ্র দিয়ে যখন গ্যাসের সরবরাহ না থাকে, তখন পাইপলাইনের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ছে। প্রত্যেক গ্রাহকের বাড়ির পাইপলাইন পানিতে ভর্তি। তিতাসের অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজার, কাশিপুর, ভোলাইল, হাটখোলা, বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ, নরসিংহপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি গ্যাসের সংকট চলছে। ওই সব এলাকায় সকাল থেকে রাত অবধি তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনে গ্যাস মিলছে না।

বাসাবাড়িতে গ্যাস না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক গ্রাহকেরা। গ্যাস–সংকটের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে গ্যাস সিলিন্ডার ও কেরোসিনের স্টোভ ও লাকড়ি ব্যবহার করছেন। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিতাস গ্যাসকে বিল পরিশোধের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে।

পূর্ব ইসদাইর এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পাইপলাইনে আমরা কোনো গ্যাস পাচ্ছি না। কয়েক দফা তিতাসের রাইজার খুললে পাইপলাইনের ভেতর থেকে প্রচুর পানি বের করা হয়েছে। পাইপলাইন পানি দিয়ে ভরে থাকলে আমরা গ্যাস পাব কীভাবে? বিষয়টি তিতাসকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা উচিত।’