খুলনার আদালত
আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরেও মামলার সুরাহা হয় না
বছরের পর বছর ধরে আদালতে মামলা ঝুলে আছে। বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বিচারক–সংকট, মামলার আধিক্য, অভিযোগপত্রে নারাজি, আসামিপক্ষের বারবার সময়ের আবেদন, সময়মতো সাক্ষীদের হাজির করতে না পারা, মামলার নিষ্পত্তিতে আইনজীবীদের গাফিলতি এর মূল কারণ। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাদী-বিবাদীরা।
২০০৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের রামনগর এলাকায় গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শিউলি আক্তার (ছদ্মনাম)। ধর্ষণের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছিলেন এলাকাবাসী। তিনজনকে আসামি করে রূপসা থানায় মামলা করেছিলেন শিউলি আক্তারের স্বামী রেজাউল ইসলাম (ছদ্মনাম)।
আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। আর যাঁরা আসামিদের আটক করেছিলেন, তাঁরাও ২২ ধারায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার তিন মাস পর পুলিশ তিনজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
কিন্তু মামলাটি এখন কোন পর্যায়ে আছে, তা জানেন না বাদী। আদালতে কয়েকবার খোঁজ নিতে গেলেও মামলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি বাদীকে সাক্ষীর জন্যও কখনো ডাকা হয়নি। ১৩ বছর ধরে ন্যায়বিচার পেতে বাদী আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন।
মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা বাদী ও বিবাদীকে আর্থিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কোনো মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকলে পরে তা নিষ্পত্তিতেও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।মোমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা জেলার সমন্বয়কারী আইনজীবী
রেজাউল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁর স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখনো সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। ঘটনার পর লোকলজ্জার ভয়ে এলাকাও ছাড়তে হয়েছে তাঁদের। হারিয়েছেন চাকরিও। তবে আসামিরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
রেজাউল আরও বলেন, ‘আমরা চাই আসামিদের শাস্তি হোক। শাস্তি হলে আমরা মানসিকভাবে শান্তি পাব। তবে মামলার যা অগ্রগতি, তাতে দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছি। আদালত থেকে কোনো তথ্যই দেওয়া হচ্ছে না। আমারসহ কারোরই সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো করা হয়নি।’
রেজাউলের মতো অসংখ্য বিচারপ্রার্থী বছরের পর বছর খুলনার বিভিন্ন আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরেও মামলার কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না। আদালতগুলোতে এমন বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৮৭ হাজারের মতো। আদালত আছে ৫৭টি। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা রয়েছে ৫০ হাজার ৯৫৪টি। এটি গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকের চিত্র। এর বাইরে প্রতি মাসে ১০০টির মতো মামলা যুক্ত হচ্ছে আদালতে। নিষ্পত্তির হারও বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।
বাদী, আসামি ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিচারক–সংকট, মামলার আধিক্য, মামলার প্রতিবেদন দেরিতে আসা, অভিযোগপত্রে নারাজি, আসামিপক্ষের বারবার সময়ের আবেদন, উচ্চ আদালতে মামলা স্থগিত করে রাখা, সময়মতো সাক্ষীদের হাজির করতে না পারা, মামলার নিষ্পত্তিতে আইনজীবীদের গাফিলতিসহ বিভিন্ন কারণে বছরের পর বছর ধরে আদালতে মামলা ঝুলে থাকছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাদী-বিবাদীরা।
প্রতি ধার্য তারিখে বাদীকে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়। কিন্তু বাদী হাজির হন না। এ কারণে এখনো ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি।কাজী সাব্বির আহমেদ, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী
অন্যদিকে সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সমন জারি ও গ্রহণে দেরি, বারবার সময়ের আবেদন, ওয়ারিশদের পক্ষভুক্তি, আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া, বিচারাধীন আদালতের প্রতি অনাস্থা এনে বিবিধ মামলা করা, ভূমি পরিমাপে কমিশন নিয়োগের দেরি, আরজি সংশোধন, বারবার আপত্তি দিয়ে সময়ক্ষেপণের কারণে ঝুলে থাকে মামলাগুলো।
দিনের পর দিন মামলা–মোকদ্দমা নিয়ে সাধারণ মানুষের এমন ভোগান্তি সম্পর্কে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা জেলার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা বাদী ও বিবাদীকে আর্থিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কোনো মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকলে পরে তা নিষ্পত্তিতেও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। ফলে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আদালতে মামলার কার্যক্রম সব শেষ হওয়ার পরও একজন বিচারককে একটি মামলার রায় দিতে বেশ সময় নিতে হয়। কিন্তু একই আদালতে যদি অনেক মামলা থাকে, তাহলে বিচারক মামলার শুনানি শেষ করে অন্য মামলার রায় লেখার জন্য সময় দিতে পারেন না।তারিক মাহমুদ, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক
বিচারাধীন মামলা
খুলনা জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের আওতাধীন ১৭টি থানা রয়েছে। আর বিচারের জন্য আদালত রয়েছে ৫৭টি। এর মধ্যে ৯টি ট্রাইব্যুনাল। অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত আদালতগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এসব আদালতে মোট মামলা চলমান রয়েছে ৮৬ হাজার ৮২০টি। এর মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আওতাধীন ৯টি আদালতে ফৌজদারি মামলা আছে ৩ হাজার ৯৪১টি। আর ২১টি আদালতে দেওয়ানি মামলা রয়েছে ৫০ হাজার ৯৫৪টি। এর মধ্যে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ১৪ হাজার ৮৪টি আর অর্থঋণ আদালতে মামলা রয়েছে ৯৬৭টি।
এ ছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আওতাধীন ১২টি আদালতে মামলা রয়েছে ৯ হাজার ২৩৬টি। মহানগর দায়রা জজ আদালতের আওতাধীন চারটি আদালতে মামলা রয়েছে ৯ হাজার ৩৩৪টি। বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে ২০৭টি ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা চলমান রয়েছে ৮ হাজার ৬২৫টি।
এর বাইরে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৩৪৮টি, সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে ১০টি, নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১–এ ১ হাজার ৩০৬টি, নারী ও শিশু নিযাতন ট্রাইব্যুনাল-২–এ ১ হাজার ২৭৬টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৩–এ ১৯২টি, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ৭৬৬টি, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ৩০৭টি, বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১৪৩টি ও মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে ১৪৫টি মামলা চলমান ছিল।
১১ বছরে ৬১ বার সময় বদল
২০১০ সালের ১০ জুন সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে খুলনা নগরের শামসুর রহমান সড়কে জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ২৯ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর হোসেনকে। ওই ঘটনার পরদিন খুলনা সদর থানায় মামলা করেন জাহাঙ্গীরের বাবা ইলিয়াস হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, মামলায় আসামি করা হয় ছয়জনকে।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দি অনুযায়ী, খুনের ঘটনা ও পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত আরও তিনজনের নাম বেরিয়ে আসে। মোট নয়জনকে আসামি করে ২০১১ সালের ৫ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই মামলার প্রথম শুনানির দিন ধার্য ছিল ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর। পরে ২০১৩ সালে মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য রয়েছে। গত ১০ বছরে ৬১ বার মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। কিন্তু এখনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
জানতে চাইলে ওই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজী সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি ধার্য তারিখে বাদীকে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়। কিন্তু বাদী হাজির হন না। এ কারণে এখনো ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি।
মামলার সূত্র ধরে বাদী ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই মামলার আসামিদের বেশির ভাগই শহরের কুখ্যাত খুনি। মামলা হওয়ার পর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকবার হুমকি দিয়েছে, অস্ত্র ঠেকিয়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ার জন্য বলেছে। এসব ব্যাপারে থানায় কয়েকবার সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি। দুই ছেলে সংসার করছে। মামলার হাজিরা দিতে গেলে আসামিরা যেকোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারে।’
জমির মামলায় ভোগান্তি
খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের শেওড়া মৌজায় ১ দশমিক ২ একর জমি ছিল দীলিপ বর্মণের নানা সতীশ চন্দ্র মণ্ডলের। সতীশ চন্দ্র মণ্ডল ছিলেন এ দেশের নাগরিক। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁর জমিটি অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এতে বিপাকে পড়েন সতীশ চন্দ্র মণ্ডল। তিনি নিজের জমি ফিরে পাওয়ার আশায় আদালতে মামলা করেন। ১৯৯৫ সালে মামলার রায় তাঁর পক্ষে আসে। নিজের জমি ফিরে পান সতীশ চন্দ্র। তবে ২০১১ সালের গেজেটে আবার ওই সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়। ওই বছরই এর বিরুদ্ধে খুলনা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে মামলা করেন দীলিপ বর্মণের বাবা কিশোরী মোহন বর্মণ। ১১ বছর ধরে মামলাটি সেভাবেই আছে।
গত ১৩ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে কাগজ নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় দীলিপ বর্মণকে। তিনি বলেন, মামলাটি দেখতেন তাঁর বাবা কিশোরী মোহন বর্মণ। ১১ বছর ধরে তিনি শুধু আইনজীবীকে টাকা দিয়ে এসেছেন। মামলা কোন পর্যায়ে আছে, তা তাঁকে জানানো হয়নি। প্রতিবছর কমপক্ষে ১০টি করে মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। এত দিন আইনজীবী শুধু বলেছেন আর কিছুদিনের মধ্যেই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। এ করে করেই ১১ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন আইনজীবী। আর প্রতি মাসে খরচ বাবদ তাঁর বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
দীলিপ বর্মণ আরও বলেন, এত দিন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাঁর সন্দেহ হয়। গত বছরের জুলাইয়ের দিকে তিনি আদালতে গিয়ে মামলা সম্পর্কে খোঁজ নেন। জানতে পারেন অর্পিত সম্পত্তির মামলার নিষ্পত্তি ছয়টি ধাপে সম্পন্ন হয়। গত ১১ বছরে এর কোনো ধাপ শুরুই করা হয়নি, কোনো শুনানিও করা হয়নি। আইনজীবী শুধু নির্ধারিত দিনে হাজিরা দিয়ে টাকা নিয়ে গেছেন।
সরকারি কৌঁসুলিরা যা বলছেন
মামলা নিষ্পত্তিতে গড়িমসি করা, বাদীদের তথ্য না জানানো, সাক্ষী ও বাদী হাজির হলে ফিরিয়ে দেওয়া, মামলা পরিচালনা না করে বছরের পর বছর শুধু দিন ধার্য করে বাদী ও বিবাদীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। তবে আইনজীবীদের দাবি, মামলা নিষ্পত্তিতে তাঁরা যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে নিষ্পত্তিতে দেরি হয়।
খুলনা জেলা রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি এনামুল হক বলেন, আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ বিচারক–সংকট। এর পাশাপাশি মামলার আধিক্য, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশসহ বিভিন্ন কারণে মামলা নিষ্পত্তি হতে দেরি হয়। অনেক সময় আদালতের মামলা নিষ্পত্তির আগেই পারিবারিকভাবে বাদী-বিবাদীদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়।
তখন আদালতকে তাঁরা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। এসব কারণ মামলা নিষ্পত্তিতে প্রভাব ফেলে। তবে বর্তমানে পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির হার অনেক বেড়েছে। সরকারি আইনজীবীরা মামলা নিষ্পত্তিতে বেশ সচেতন। অন্য আইনজীবীদেরও এসব ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে।
এনামুল হক আরও বলেন, বেশির ভাগ মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে রাখা হয় দিনমজুর, রিকশাচালক বা ওই এলাকার দোকানদারদের। পরে দেখা যায়, ওই সাক্ষীদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া আদালতে সাক্ষী দিতে এলে একদিকে যেমন সাক্ষীর আর্থিক ক্ষতি হয়, অন্যদিকে সময়ের অপচয় হয়। এসব কারণে সাক্ষী দিতে অনীহা দেখা যায়। ফলে মামলাটি ঝুলে থাকে।
অপরাধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মামলার সংখ্যা বাড়লেও বিচারকের সংখ্যা বাড়েনি—এমন মন্তব্য করে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি কাজী সাব্বির আহমেদ বলেন, কোনো কোনো আদালতে দু-তিন মাস ধরে বিচারক থাকেন না। এমন পরিস্থিতিতে মামলার জট তৈরি হয়। আইনজীবীরা আরেকটু আন্তরিক হলে মামলাজট অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
করণীয় কী
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারিক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে মামলার কার্যক্রম সব শেষ হওয়ার পরও একজন বিচারককে একটি মামলার রায় দিতে বেশ সময় নিতে হয়। কিন্তু একই আদালতে যদি অনেক মামলা থাকে, তাহলে বিচারক মামলার শুনানি শেষ করে অন্য মামলার রায় লেখার জন্য সময় দিতে পারেন না। এ কারণে সবার আগে প্রয়োজন আদালতে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে কয়েক হাজার মামলা ঝুলে ছিল। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নিষ্পত্তিতে আরও দুটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এখন মামলার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। মামলার নিষ্পত্তিও হচ্ছে বেশ জোরেশোরেই।
তাঁর মতে, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে বাদী, বিবাদী, আইনজীবী থেকে শুরু করে সব পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে। নির্ধারিত দিনে সাক্ষী হাজিরের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত সমন জারির ব্যবস্থা করতে হবে। অপ্রয়োজনে বারবার সময় বাড়িয়ে মামলা বিলম্বিত করা যাবে না। সরকারি কৌঁসুলিদের আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে।