শ্রেণিকক্ষ–সংকটে পাঠদান ব্যাহত

বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী বাড়ার পরিবর্তে দিনে দিনে কমছে। ২০১৭ সালে ১৮৯ জন শিক্ষার্থী ছিল, এখন ১৩৭ জনে নেমে এসেছে।

মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন না হওয়ায় ছোট এই ঘরে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয় ২০১৪ সালে। এর পর আট বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়টি চলছে পুরোনো একটি টিনের ঘরে। জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। অবকাঠামোগত নানা সমস্যার কারণে বিদ্যালয়টিতে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে পৌর এলাকার চর বেউথা এলাকায় কদমলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় কুশিয়ার চর গ্রামের বাসিন্দা আইনজীবী এ টি এম শাহজাহান। তিনি নিজের জমি দান করেন। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৭। শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী রায় বলেন, ভবন না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষ–সংকটসহ বিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ভালো পড়াশোনার জন্য স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন ও অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ার পরিবর্তে দিনে দিনে কমছে। ২০১৭ সালে ১৮৯ জন শিক্ষার্থী ছিল, এখন ১৩৭ জনে নেমে এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, চৌচালা একটি টিনের ঘরে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এই ঘরে মাঝখানে বেড়া দিয়ে চারটি ছোট কক্ষ বানানো হয়েছে। একটি কক্ষে শিক্ষকেরা দাপ্তরিক কাজ করছেন। অন্য তিনটি কক্ষে শিশু থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির পাঠদান করা হচ্ছে। জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীদেরও গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই, নেই শৌচাগার। একটি অগভীর নলকূপ বসানো হলেও আয়রনের মাত্রা বেশি।

শ্রেণিকক্ষ-সংকট আর অবকাঠামোগত করুণদশার কারণে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রথম পালায় শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং বেলা ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ইয়াসিন হোসেন ও কাশফিয়া আক্তারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিদিন গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করে তারা। ক্লাসে একটু দেরি করে এলে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। দুজনের বেঞ্চে কখনো চারজনকে বসতে হয়। পাশের কক্ষের চেঁচামেচিতে কী পড়ানো হয়, তা–ও ঠিকমতো বোঝা যায় না।

বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনার কোনো পরিবেশ নেই বলে জানান কয়েকজন অভিভাবক। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ টি এম শাহজাহান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি বিদ্যালয়ে পাকা ভবন হবে। ভবন হলে বিদ্যালয়ের সব সমস্যা দূর হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহসীন রেজা বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ঠিকাদার নিয়োগও হয়েছে। কিন্তু কারিগরি কিছু বিষয়ের কারণে ভবন নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে।