কাউন্সিলরের আত্মীয়কে নিয়ম না মেনে ইজারা

গত ২৫ মে প্রথম তারিখে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে মো. আলমগীর ভ্যাট ও আয়করসহ ৭০ লাখ টাকায় হাট ইজারা নেওয়ার কাগজপত্র জমা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ম না মেনে প্রথম তারিখে দরপত্র জমা দেওয়া একমাত্র ব্যক্তিকেই কোরবানির পশুর হাটের ইজারা দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ওই ব্যক্তি এক কাউন্সিলের আত্মীয়। ওই ব্যক্তিকে ইজারা দিতেই নির্ধারিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় তারিখে দরপত্র বিক্রি করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে এক সাবেক কাউন্সিলের দরপত্র বিক্রি নিয়ে হট্টগোলও হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার কোরবানির পশুর হাট ইজারার জন্য প্রথম দফায় মাত্র একজন ব্যক্তি দরপত্র কেনেন। গত ২৫ মে প্রথম তারিখে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে মো. আলমগীর মিয়া নামের এক ব্যক্তি ভ্যাট ও আয়করসহ ৭০ লাখ টাকায় পশুর হাট ইজারা নেওয়ার কাগজপত্র জমা দেন। তিনি পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাকিল মিয়ার আত্মীয়। কাউন্সিলর শাকিল ও শহরের ভাদুঘর এলাকার রতন মিয়া ইজারায় আলমগীরের অংশীদার।

এদিকে ইজারা পুনরায় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে মেয়রের কাছে লিখিত দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। গত ২৯ মে এক লিখিত আবেদনে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দির বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, ইজারার দরপত্রের প্রক্রিয়া তিনটি পর্যায়ে হওয়ার কথা রয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার আওতাধীন ভাদুঘর বাস টার্মিনালের মাঠে (বর্তমানে বিজয় মেলার মাঠ) চার দিনব্যাপী অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তির অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ দরদাতা হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে অতিরিক্ত পে-অর্ডার সংযোগ করে নতুন শিডিউল ক্রয় করে দরপত্র জমা করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে দরপত্র বিক্রির তারিখ ২৪ মে এবং জমা দেওয়ার তারিখ ২৫ মে বেলা একটা পর্যন্ত; দ্বিতীয় পর্যায়ে দরপত্র বিক্রির তারিখ ৩১ মে এবং জমা দেওয়ার তারিখ ১ জুন এবং তৃতীয় পর্যায়ে দরপত্র বিক্রির তারিখ ৭ জুন এবং জমা দেওয়ার তারিখ ৮ জুন উল্লেখ করা হয়। কাউন্সিলের আত্মীয় আলমগীরকে পশুর হাট ইজারা দিতে নির্ধারিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় তারিখে দরপত্র বিক্রি করেনি পৌরসভা।

পৌরসভার প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষে পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে ভ্যাট ও আয়করসহ ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আবদুল মতিন ভূঁইয়া নামে একজন পশুর হাট ইজারা পেয়েছিলেন। গত বছর ৬৬ লাখ টাকায় পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রথম দরপত্র জমা দেওয়া ব্যক্তিকে পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৩১ মে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল হাই সঙ্গে জাকির হোসেন, জামাল মিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান ও আবদুল মতিনকে নিয়ে পৌরসভায় বেলা দুইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তাঁদের কাছে দরপত্র বিক্রি করেনি পৌরসভা। ৩১ মে দরপত্র বিক্রি বন্ধ নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. কুদদূসের সঙ্গে সাবেক কাউন্সিল আবদুল হাইয়ের হট্টগোল হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কাউন্সিলের আত্মীয় ও নিকটস্থ ব্যক্তিকে ইজারা দিতেই দরপত্র বিক্রি করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ মে কাউন্সিলের আত্মীয় আলমগীরকে পশুর হাটের ইজারার কার্যাদেশ দিয়েছে পৌরসভা।

পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমার মাধ্যমে কিছু হয় না। আমি ইজারাদারের মালিক না।’

একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কুদদূসের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন, গত তিন বছরের ইজারার গড় মূল্যসহ ৬ শতাংশ ইজারার মূল্য পাওয়া লক্ষ্য ছিল। সেখানে সরকারি দরের চেয়ে ইজারার মূল্য সাড়ে ১৪ শতাংশ বেশি পেয়েছেন। তাই শিডিউল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়।